বাণিজ্যিক বৈষম্য বা ট্রেড ডেফিসিট হলো যখন একটি দেশের আমদানি তার রপ্তানির তুলনায় বেশি হয়। উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরোও প্রকট; কারণ তাদের উৎপাদনশীলতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও রাষ্ট্রীয় নীতিমালা অনেক সময় অনুকুলে থাকে না।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান— এই তিনটি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, তাদের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির সমস্যা বিদ্যমান। বাংলাদেশে বাণিজ্য ঘাটতির বিবরণ চিত্র নং- ১ এ দেখানো হলো। এটি সমাধানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন।
চিত্র নং- ১: বাংলাদেশের আমদানি, রপ্তানি ও বাণিজ্য ঘাটতি
বাণিজ্য ঘাটতি উন্নয়নের পরিপন্থী। এটি দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে এবং শিল্প প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে। বাংলাদেশের জন্য প্রতিবেশীদের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত চ্যালেঞ্জ।
এই প্রবন্ধে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এই ভারসাম্যহীনতা কমানোর জন্য উপায়গুলি তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য সমস্যার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র
বাংলাদেশে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে- প্রচুর পরিমাণে তৈরি পোশাক (RMG) রপ্তানি করলেও কাঁচামাল, জ্বালানি, মূলধনী পণ্য এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি এখনও অনেক বেশি। ফলে পণ্য বাণিজ্যের ভারসাম্য নেতিবাচক।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং টাকার উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মসংস্থান সঙ্কোচিত হচ্ছে; সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য আমদানি এবং রপ্তানি বাণিজ্যের যে চিত্র প্রকাশ করেছে তা সুখপ্রদ নয়।
আমদানির একটি বড় অংশ আসে কাছের দেশগুলি থেকে। এটা স্বাভাবিক। নৈকট্য পণ্য পরিবহন খরচ কমিয়ে দেয়। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বেশি আমদানি হলে ঘাটতি তৈরি হবে যদি না সেই প্রতিবেশী দেশগুলিতে রপ্তানি বাড়ানো যায়। এ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
বাংলাদেশ বনাম ভারত: প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি
এই উপমহাদেশে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হলো বাংলাদেশ- ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাণিজ্য হয়েছে প্রায় ১৩.৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । বিগত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ভারতে মাত্র ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর ফলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
স্বাধীন ট্র্যাকার এবং আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানও মূল্যের দিক থেকে ভারতকে বাংলাদেশের শীর্ষ আমদানির উৎস হিসেবে দেখিয়েছে। ভারত অনেক শিল্প উপকরণ- সার, খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ এবং ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করে। একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ভারতের বাইরের বাজারে (ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হলেও ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ সংকীর্ণ।
কেন ভারতের সাথে এই ব্যবধান এত বেশি?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান বিদ্যমান থাকার কারণ হলো বাংলাদেশ ভারত থেকে শিল্প পণ্য, কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি সীমিত। তদুপরি অ-শুল্ক বাধা, সরবরাহ সমস্যা এবং সীমিত পণ্য বৈচিত্র্য বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি স্থায়ী ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে।
ভারত-বাংলাদেশে পণ্য চাহিদার মিল নেই
বাংলাদেশ ভারত থেকে উচ্চ মূল্যের শিল্প পণ্য এবং উপকরণ আমদানি করে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ হতে ভারতে রপ্তানির জন্য পণ্যসম্ভার সে দেশের চাহিদার সাথে মেলে না। চাহিদা না থাকলে আমদানি হবে না এটাই স্বাভাবিক। ভারত ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫,০৬৯টি পণ্য রপ্তানি করেছে। যেমন- খনিজ জ্বালানি, খনিজ তেল এবং তাদের পাতন থেকে উৎপাদিত পণ্য, বিটুমিনাস পদার্থ, খনিজ মোম, সুতা, ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে ভারত বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮০৬টি পণ্য আমদানি করেছে। যেমন- পুরুষদের বা ছেলেদের সুতির ট্রাউজার, ব্রীচ এবং শর্টস, জুতা, ইত্যাদি। ভারত থেকে ৫,০৬৯ টি পণ্যের আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয়েছে মাত্র ৮০৬ ধরনে পণ্য। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি- কথায় বড় হওয়া গেলেও বাণিজ্যে চুনোপুঁটি।
ট্রানজিট এবং লজিস্টিক নিয়ম
ঐতিহাসিকভাবে স্থল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য সহজীকরণ উভয় পক্ষকে সাহায্য করেছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তন (উদাহরণস্বরূপ, ভারতের ট্রানজিট/ট্রানশিপমেন্ট ব্যবস্থায় পরিবর্তন) বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য খরচ এবং পরিবহন পথের দূরত্ব প্রভাবিত করেছে। রাষ্ট্রীয় পলিসির কারনে কিছু ট্রানজিট ব্যবস্থাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
শুল্ক-বহির্ভূত বাধা এবং স্যানিটারি নিয়ম
কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রীর জন্য SPS (স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি) এবং প্রযুক্তিগত নিয়মগুলি দ্রুত বাজারে প্রবেশাধিকার সীমিত করে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি সম্প্রসারণের পরিমাণ হ্রাস করেছে।
বাজার প্রতিযোগিতা এবং পরিধি
বাজার প্রতিযোগিতা ও পরিধি বিষয়ক আলোচনায় দেখা যায় যে, ভারতের দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী। তারা যে ধরনের পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে তা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য প্রতিকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে; বিষেশত মূল্য এবং স্টাইল প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র
পণ্য বৈচিত্র একটি দেশেরে রফতানি সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে রফতানি পণ্যে তেমন বৈচিত্র নেই বললেই চলে। আছে শুধু তৈরি পোশাক যা ভারতীয় চাহিদা পূর্ণ করতে পারে না।
তদুপরি ভারতের অভ্যন্তরে দেশীয় নির্মাতাদের সাথে এবং অন্যান্য দেশ থেকে কম মূল্যে আমদানি করা পোশাকের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। ভারতীয় ভোক্তাদের স্টাইল, আকার এবং বিতরণ নেটওয়ার্ক আলাদা হওয়ায় ভারসাম্যহীন প্রতিযোগীতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকে।
বাণিজ্য ঘাটতির প্রভাব
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বৃহৎ বাণিজ্য ঘাটতি এদশের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে। এটি রাজনৈতিক সংবেদনশীলতাও বাড়ায়; কারণ ভারতের সাথে বাণিজ্য বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে দৃশ্যমান একটি বিষয়। বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব এবং নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপগুলি আন্তঃসীমান্ত পরিবহনের উপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের হুমকির মুখে ফেলছে।
বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান: একটি ছোট কিন্তু অর্থবহ বাণিজ্য ঘাটতি
পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক তেমন বড় নয়। তথাপি আমরা পিছিয়ে- বিগত ২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশ পাকিস্তানে প্রায় ৬২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়েছে প্রায় ৬২৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক ঘাটতি ছিল প্রায় ৫৬৬ মিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানের সাথে কেন এই বাণিজ্য ঘাটতি?
পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য রয়েছে। তবে বাংলাদেশি পণ্য কম রপ্তানি হওয়ায় লেনদেনে ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে এই ঘাটতি কমানো যায়। সামগ্রিকভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ কম। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে সীমিত পরিপূরক বাণিজ্য রয়েছে। তবে অন্যান্য প্রতিবেশীর তুলনায় বাণিজ্য সংযোগ অনুন্নত।
বিভিন্ন শিল্প কাঠামো
পাকিস্তান কিছু টেক্সটাইল, সিমেন্ট, রাসায়নিক দ্রব্য এবং যন্ত্রপাতি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে। তবে বাংলাদেশ আমদানি করছে তূলা, ফ্যাব্রিক্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি শক্তি তৈরি পোষাক এবং কিছু কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য; কিন্তু পাকিস্তানের চাহিদার সাথে তা মেলে না।
সরবরাহ এবং নীতিগত ঘাটতি
ভারতের সাথে যেরকম দক্ষ ও কম খরচের নিবেদিতপ্রাণ সরবরাহ লাইন বা বাণিজ্য সুবিধা আছে তা পাকিস্তানের সাথে নেই। রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং শক্তিশালী ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কের অভাব রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করছে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান বাণিজ্য ঘাটতির প্রভাব
যদিও ভারতের তুলনায় ডলারের মূল্য কম, তবুও পাকিস্তানে রপ্তানি বাড়ানের সুযোগ রয়েছে। এটি পাকিস্তানের জন্য নতুন পণ্য চ্যানেল খোলার জন্য বাংলাদেশ আরও কিছু করতে পারে।
ভারত-পাকিস্তান এর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার কাঠামোগত কারণ
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার প্রধান কারণ হলো উৎপাদন ও রপ্তানি সক্ষমতার পার্থক্য, বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের অমিল, কৌশলগত ও রাজনৈতিক বিবাদ। ফলে কিছু দেশ বেশি রপ্তানি করে অন্য দেশগুলোর তুলনায়।
শিল্প উপকরণের জন্য আমদানি নির্ভরতা
বাংলাদেশ এখনও অনেক মধ্যবর্তী শিল্প পণ্য, যন্ত্রাংশ, জ্বালানি এবং রাসায়নিক আমদানি করে। কাঠামোগত চাহিদা পণ্য ঘাটতিকে আরোও বাড়িয়ে তোলে।
রপ্তানি বৈচিত্র কম
তৈরি পোশাকের (RMG) উপর অত্যধিক নির্ভরতা বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তদুপরি তৈরি পোশাক সবসময় আঞ্চলিক চাহিদা পূরণ করে না বা করতে পারে না স্টাইল ও পছন্দের তারতম্যে কারনে।
বাণিজ্য সুবিধা এবং অ-শুল্ক বাধা
অনুমোদন, সীমান্তে বিলম্ব, স্যানিটারি এবং ফাইটোস্যানিটারি ব্যবস্থা এবং কঠিন শুল্ক নিয়ম প্রতিযোগিতা হ্রাস করে। ট্রানজিট/ট্রান্সশিপমেন্টে সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তন ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিরোধ বা জটিলতা আরও বাড়িয়েছে।
সরবরাহ ও অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা
বন্দর, অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা ও সীমান্তের সুবিধা সীমিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশীদের বাণিজ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘ যানজট, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও সীমান্তে অপ্রতুল নিরাপত্তা এ সমস্যার মূল কারণ। ফলে পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা সহজতর না হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পর্কের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নীতি ও কূটনীতি
নীতি ও কূটনীতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে রাজনৈতিক পছন্দ ও স্বার্থ অনুযায়ী শুল্ক, কোটা, ট্রান্সশিপমেন্ট অধিকার এবং অন্যান্য বাণিজ্য-সক্ষম ব্যবস্থা গঠন করে। এ সব ব্যবস্থা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দেশগুলো স্বার্থ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর ও সুবিধাজনক হয়।
বাংলাদেশ কীভাবে প্রতিবেশীদের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারে?
নিচে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের উল্লেখ করা হলো। আমি সেগুলিকে স্বল্পমেয়াদী (১-২ বছরের মধ্যে) এবং মধ্যমেয়াদী (৩-৭ বছর) পদক্ষেপে ভাগ করছি। বেশিরভাগই কম খরচের নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ। কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং আলোচনার প্রয়োজন হবে।
১) বাণিজ্য তথ্য এবং পর্যবেক্ষণ ঠিক করা (স্বল্পমেয়াদী)
বাংলাদেশের উচিত অংশীদার-নির্দিষ্ট বাণিজ্য বিশ্লেষণ জোরদার করা। সময়োপযোগী এবং সঠিক দ্বিপাক্ষিক তথ্য সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। কাস্টমস, ইপিবি (Export Promotion Bureau), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অংশীদারদের তথ্য ব্যবহার করে সর্বাধিক ঘাটতি এবং সর্বোচ্চ রপ্তানি সম্ভাবনা সম্পন্ন পণ্য লাইন চিহ্নিত করা। সঠিক তথ্য নীতি প্রণয়ন এবং ফলাফল পর্যবেক্ষণ বাণিজ্য সহায়ক হয়।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
- প্রতি মাসে অংশীদার-বাই-প্রোডাক্ট ঘাটতি ড্যাশবোর্ড প্রকাশ করতে হবে।
- ক্রস-চেকিং এর জন্য UN Comtrade (প্রায় ২০০টি দেশ এবং অঞ্চলের বার্ষিক এবং মাসিক আমদানি ও রপ্তানির বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম) এবং WITS (আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং শুল্ক তথ্য প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংক এবং UNCTAD দ্বারা তৈরি একটি সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম) ব্যবহার করতে হবে।
২) প্রতিবেশীদের চাহিদানুযায়ী পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে (স্বল্প-মধ্যমেয়াদী)
বাংলাদেশকে ভারত, পাকিস্তান বা মায়ানমার যে পণ্যগুলি কিনে, সেগুলির রপ্তানি সম্প্রসারণ করতে হবে। এগুলো হতে পারে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য এবং প্রকৌশল পণ্য।
কীভাবে কাজটি করা যাবে?
- ইপিবি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ভারত, পাকিস্তান এবং মায়ানমারের আমদানিকারক সংস্থাগুলির সাথে ক্রেতা-বিক্রেতা বৈঠক পরিচালনা করা।
- অংশীদার দেশের মান (স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি, প্যাকেজিং, লেবেলিং) পূরণে ক্ষুদ্র রপ্তানিকারকদের সহায়তা করা।
- এই প্রতিবেশী বাজারগুলিকে লক্ষ্য করে এমন সংস্থাগুলিকে অনুদান বা সস্তা রপ্তানি-ক্রেডিট লাইন অফার করা।
৩) রফতানি পণ্যে মূল্য সংযোজন (মাঝারি মেয়াদে)
পণ্যের গুণমান বৃদ্ধি করলে প্রতি ইউনিটের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি পায়। পোষাক প্রস্তুতকারি সংস্থাগুলিকে প্রযুক্তিগত পোশাক, হোম টেক্সটাইল এবং সংলগ্ন বাজারের জন্য দ্রুত ফ্যাশন উৎপাদনে সহায়তা করা যেতে পারে। তদুপরি প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং হালকা প্রকৌশলের মতো খাতগুলিকেও শক্তিশালী করতে হবে।
কীভাবে এগুলো করা যাবে?
- পণ্য নকশা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেশনের জন্য কারিগরি সহায়তা।
- প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি হওয়া পণ্যের জন্য শুল্ক এবং কর সুবিধা সহ রপ্তানি প্রচার।
৪) আঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা উন্নত করা (স্বল্পমেয়াদী)
সীমান্তে জটিলতা বা বিরূপতা প্রকৃত খরচ বাড়ায়। সুসম্পর্ক বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া উন্নত করে, খরচ কমায় এবং রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
কী কী পদক্ষেপ নেয় যায়?
- শুল্ক ব্যবস্থা ডিজিটালাইজ করা এবং অংশীদার দেশগুলির সাথে নথি সমন্বয় করা।
- স্থলবন্দর এবং এক সীমান্ত পোস্টে সবকিছু সম্পন্ন হয় এমন পোস্টের সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণ করা।
- উভয় পক্ষের জন্য কার্যকর ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করা। আলোচনা মুরু করা। সাম্প্রতিক ব্যাঘাতগুলি সম্পর্কে উল্লেখ করা এবং ব্যবস্থাগুলি নিয়ম-ভিত্তিক করার জন্য কাজ করা, সাময়িক সময়ের জন্য নয়।
৫) অগ্রাধিকারমূলক এবং আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য চুক্তি (মাঝারি মেয়াদী)
অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক দ্রুত বাজার উন্মুক্ত করতে পারে। বাংলাদেশের উচিত প্রতিবেশীদের সাথে আরোও দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা। যেখানে পূর্ণ মুক্ত বাণিজ্য রাজনৈতিকভাবে কঠিন সেখানে সীমিত পণ্য তালিকা বা পাইলট স্কিম নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
কী কী পদক্ষেপ নেয় যায়?
- বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে রপ্তানি করতে পারে এমন পণ্যের জন্য পণ্য-স্তরের শুল্ক হ্রাসের চেষ্টা করা যেতে পারে।
- অ-শুল্ক বাধা অপসারণের জন্য প্রযুক্তিগত কমিটি ব্যবহার করা।
৬) লজিস্টিক সাপোর্ট এবং মাল্টিমোডাল সংযোগ (মাঝারি মেয়াদী) সহায়তা
শিপিং, অভ্যন্তরীণ পরিবহন এবং সীমান্ত অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত অবকাঠামো সময় এবং খরচ কমায়। যে পদক্ষেপগুলো নিতে হবে তা হলো-
- স্থলবন্দরের কাছাকাছি অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোতে বিনিয়োগ করা।
- সীমান্তবর্তী পণ্য পরিবহনের জন্য ফিডার রোড এবং নদী টার্মিনাল উন্নত করা।
- লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এর ব্যবহার।
৭) সীমান্তবর্তী বিনিয়োগ এবং যৌথ উদ্যোগ (মাঝারি মেয়াদে)
প্রতিবেশী দেশের স্থানীয় বাজারের জন্য উৎপাদনের জন্য ভারতীয় বা পাকিস্তানি সংস্থাগুলির সাথে যৌথ উদ্যোগকে উৎসাহিত করা। স্থানীয় উৎপাদন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আমদানি বিল কমায়। করনীয় কী হবে? যৌথ প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা এবং জমি/ইউটিলিটি প্যাকেজ অফার করা এবং প্রতিবেশী বাজার লক্ষ্য করে রপ্তানিমুখী বিনিয়োগের জন্য দ্রুত অনুমোদন।
৮) প্রতিবেশীদের কাছে পরিষেবা রপ্তানি জোরদারকরন (স্বল্প-মধ্যমেয়াদী)
পরিষেবা যথা, তথ্যপ্রযুক্তি, সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বড় ধরনের আমদানি ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশের একটি ক্রমবর্ধমান আইটি খাত রয়েছে। ভারত ও মায়ানমারে সফ্টওয়্যার, বিপিও এবং পেশাদার পরিষেবা রপ্তানি পরোক্ষভাবে পণ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
- যোগ্যতার দ্বিপাক্ষিক স্বীকৃতি এবং স্বল্পমেয়াদী প্রকল্প কাজের জন্য সহজ ভিসা/কাজের নিয়ম চালু করা।
- তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য রপ্তানি ঋণ এবং বাণিজ্যীকরণে সহায়তা।
৯) মুদ্রা এবং অর্থায়নের সরঞ্জামগুলি সাবধানতার সাথে ব্যবহার (স্বল্পমেয়াদী)
বাণিজ্য অর্থায়ন এবং মুদ্রার ঝুঁকি রপ্তানি প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত করে। প্রতিবেশীদের লক্ষ্য করে রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য অর্থায়ন প্রদানের জন্য ব্যাংকগুলিকে উৎসাহিত কর যেতে পারে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো হলো- ভারত ও পাকিস্তানে রপ্তানিকারকদের জন্য রপ্তানি পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা এবং কম সুদে ঋণ প্রদান করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার ঝুঁকি কমাতে এবং আঞ্চলিক নিষ্পত্তিকে উৎসাহিত করতে যেখানে সম্ভব স্থানীয় মুদ্রা চালান ব্যবহার করা।
১০) কূটনীতির মাধ্যমে অ-শুল্ক বাধা মোকাবেলা (স্বল্পমেয়াদী)
অনেক রপ্তানি সমস্যা প্রযুক্তিগত: SPS পরীক্ষা, সার্টিফিকেশন অথবা হঠাৎ নিয়ন্ত্রক পরিবর্তন। সক্রিয় কূটনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সংলাপ এই ধরনের বাধা দূর করতে পারে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো হলো- SPS এবং মানদণ্ডের উপর যৌথ প্রযুক্তিগত কর্মী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা। হঠাৎ বিধিনিষেধমূলক পদক্ষেপগুলি দ্রুত সমাধানের জন্য অর্থনৈতিক কূটনীতি ব্যবহার করুন। সাম্প্রতিক উদাহরণগুলি উল্লেখ করুন যেখানে নীতি পরিবর্তন বাণিজ্য প্রবাহকে প্রভাবিত করেছে এবং পূর্বাভাসযোগ্য নিয়মের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
১১) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং নারী-নেতৃত্বাধীন আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করা (স্বল্পমেয়াদী)
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রায়শই এমন বিশেষ পণ্যগুলি সম্পর্কে জানেন যা সীমান্তের ওপারে ভালভাবে চলে। তাদের অনুমতি খরচ কমিয়ে বাণিজ্য সম্প্রসারিত করা যায়। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো- ক্ষুদ্র-রপ্তানির জন্য সরলীকৃত রপ্তানি ফর্ম এবং সীমান্ত সংলগ্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং নারী রপ্তানিকারকদের জন্য প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রদান।
১২) যুক্তিসঙ্গত ক্ষেত্রে নির্বাচিত আমদানি প্রতিস্থাপন (মাঝারি মেয়াদে)
কিছু কিছু আমদানি স্থানীয় উৎপাদন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এটি অদক্ষ সংস্থাগুলিকে রক্ষা করার বিষয়ে নয়। এটি এমন শিল্পের কৌশলগত উন্নয়ন সম্পর্কে যেখানে বাংলাদেশের স্পষ্ট তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে বা দ্রুত তা অর্জন সম্ভব।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
- উচ্চ আমদানি মূল্যের মধ্যবর্তী পণ্যের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করার পর বাস্তবসম্মভাবে স্থানীয় উদ্যোগক্তাদেরকে উৎসাহিত করা।
- স্থানীয় সক্ষমতা তৈরির জন্য নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহায়তা (কর ছাড়, দক্ষতা প্রোগ্রাম) প্রদান করা।
একটি রোডম্যাপ (অগ্রাধিকারসূত্রে এবং ক্রমানুসারে)
০-৬ মাস: দ্বিপাক্ষিক তথ্য উন্নত করা এবং বাণিজ্য ড্যাশবোর্ড প্রকাশ করা। তাৎক্ষণিক এনটিবি সম্পর্কে প্রযুক্তিগত সংলাপ শুরু করা। রপ্তানিকারকদের জন্য জরুরি বাণিজ্য অর্থায়নের উইন্ডো প্রদান করা
৬-২৪ মাস: ভারত ও পাকিস্তানের জন্য নির্বাচিত ক্রেতা-বিক্রেতা কর্মসূচি চালু করা। গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরগুলিতে কাস্টমস ডিজিটাইজ করা। পাইলট পণ্য-স্তরের অগ্রাধিকারমূলক স্কিম শুরু করা।
২-৫ বছর: লজিস্টিক হাবগুলিতে বিনিয়োগ, যৌথ উদ্যোগের জন্য FDI প্রচার, মূল্য সংযোজন উন্নয়ন সমর্থন এবং পরিষেবা রপ্তানি সম্প্রসারণ। মধ্যমেয়াদী অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা।
চলমান: মাসিক এবং বার্ষিক ফলাফল পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় এবং পরিমাপ।
ঝুঁকি এবং বিনিময় মূল্য হিসাবে রাখা
সুরক্ষাবাদের প্রলোভন: ঘাটতি বৃদ্ধি পেলে শুল্ক বৃদ্ধি প্রলুব্ধকর। কিন্তু ঢালাও সুরক্ষা ভোক্তা এবং নিম্নমুখী শিল্পের ক্ষতি করে। যেকোনো আমদানি-প্রতিস্থাপন নির্বাচনী এবং সময়-সীমিত হতে হবে।
রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা: ভারতের বা প্রতিবেশি কোন দেশের ক্ষতি হবে এমন পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কূটনীতি এবং স্পষ্ট অর্থনৈতিক যোগাযোগ অপরিহার্য।
আর্থিক খরচ: রপ্তানি উৎসাহ এবং অবকাঠামোর জন্য সরকারি তহবিল অথবা বেসরকারি সহ-অর্থায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশকে এমন তহবিল ব্যবহার করতে হবে যেখানে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া যায়।
বিশ্ব মন্দা: বিশ্বব্যাপী চাহিদার ধাক্কা (যেমন, ইইউ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা) রপ্তানি সম্ভাবনাকে বদলে দিতে পারে। এটি আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
বাংলাদেশ সরকারের জন্য দ্রুত, বাস্তবসম্মত নীতিমালার চেকলিস্ট
- প্রতি মাসে অংশীদার-বনাম-পণ্য বাণিজ্য ড্যাশবোর্ড প্রকাশ করুন
- ভারত ও পাকিস্তানের সাথে শুল্ক হ্রাস এবং পাইলট অগ্রাধিকার তালিকা নিয়ে আলোচনা করা।
- স্পষ্ট নিয়মের অধীনে ভারতের সাথে নির্ভরযোগ্য ট্রানজিট/ট্রানশিপমেন্ট ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা
- কাস্টমস পেপার ডিজিটালাইজ করা এবং সম্ভব হলে সার্টিফিকেটের পারস্পরিক স্বীকৃতি গ্রহণ করা।
- প্রতিবেশী বাজারে প্রবেশকারী সংস্থাগুলির জন্য রপ্তানি ঋণ সহজ এবং অনুদান চালু করা।
- বেসরকারি অংশীদারদের সাথে কমপক্ষে দুটি অগ্রাধিকারমূলক স্থল-বন্দর লজিস্টিক হাব তৈরি বা আপগ্রেড করা।
- সহজ রপ্তানি পদ্ধতি এবং বাজার বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে SME-গুলিকে সহায়তা করা।
- দ্বিপাক্ষিক স্বীকৃতি এবং বাজারে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে পরিষেবা (আইটি, সরবরাহ, স্বাস্থ্যসেবা) রফতানি করা।
FAQs
পেমেন্ট ব্যালেন্স কী?
পেমেন্ট ব্যালেন্স বলতে (BoP) একটি নির্দিষ্ট সময়কালে একটি দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে সমস্ত অর্থনৈতিক লেনদেনের একটি পরিসংখ্যানগত রেকর্ড।
BoP এর মূল উদ্দেশ্য কী?
এটি একটি জাতির আর্থিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে
উন্নয়নশীল দেশে বাণিজ্য ঘাটতির প্রধান কারণগুলো কী?
জটিল অর্থনৈতিক অবস্থা, শিল্প বিকাশের অভাব, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, বৈদেশিক বিনিয়োগের কম প্রবাহ ও চাহিদা বেশি থাকায় আমদানি বৃদ্ধি পায়।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাণিজ্য ঘাটতি কি ক্ষতিকর?
হ্যাঁ, এটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ বাড়াতে পারে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য সরকারের কী ধরনের নীতি গ্রহণ করতে পারে?
আমদানিতে শুল্ক আরোপ, রপ্তানি উন্নয়ন প্রোগ্রাম, স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন।
বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা কী?
প্রযুক্তি ও বাজারে প্রবেশের সুবিধা প্রদান, ঋণ ও ঋণ সুবিধা প্রদান ও উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করে।
উন্নয়নশীল দেশের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য কী গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, ও টেকসই উন্নয়ন নীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে ইপিবি এর ভূমিকা কী?
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যরো বাংলাদেশর একটি সরকারি সংস্থা, যা দেশের রপ্তানি প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত
বাংলাদেশের পাঁচটি বড় রপ্তানি শিল্পগোষ্ঠীর না কী কী?
শীর্ষ পাঁচটি রপ্তানিকারক শিল্প গোষ্ঠী হল যথাক্রমে ইয়ংওয়ান কর্পোরেশন, হা-মীম গ্রুপ, মন্ডল গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, প্যাসিফিক জিন্স
পাঁচটি শীর্ষ স্থানীয় আমদানিকরক দেশ কোনগুলো?
বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি আমদানিকারক দেশ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাজ্য।
উপসংহার
ভারত এবং পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ এবং উৎসের দিক থেকে ভিন্ন। ভারতের ব্যবধান সবচেয়ে বড় এবং রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে দৃশ্যমান। পাকিস্তানের ব্যবধান কম কিন্তু বাজারের সুযোগ হারানোর দিকে ইঙ্গিত করে। এই ঘাটতির কোনওটিই অনিবার্য নয়।
বাণিজ্য সুবিধা, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, মূল্য-শৃঙ্খল উন্নয়ন, স্মার্ট কূটনীতি এবং সরবরাহ ও মানদণ্ডে সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগের মিশ্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি সংকুচিত করতে পারে।
অনেক পদক্ষেপই কম খরচের এবং তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে আরো সুষম আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নয়নে, রিজার্ভ স্থিতিশীল করতে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং দ্রুত উন্নয়নকে সমর্থন করতে সহায়তা করবে।