মাটি-ফসল-পুষ্টি-মস্তিষ্কঃ সাম্যাবস্থা না হলে বিপদ

Category: Health & Wellness | Tags: No tags

Author: Jatish Chandra Biswas | Published on: September 24, 2025, 9:07 p.m.


আচ্ছা, কখনো কী ভেবে দেখেছেন আপনি যা খাচ্ছেন তা কোথায় এবং কেমন মাটিতে তৈরি হয়েছে? যা খাচ্ছেন তা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কী না? আপনার মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় শক্তি পাচ্ছে কিনা তা ভেছেন কী? সব মাটির ফসল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নয়। তাই একটু বিচার বিবেনা করে খাওয়া ভালো।

ভাবুনতো সদ্য চাষ করা জমিতে খালি পায়ে হাঁটছেন। মাটির সোদা গন্ধ, পায়ের নীচের কোমলতা বা শক্ত ঢেলার চাপ এবং আর তারও নীচে অদৃশ্য জীবনের ঘনঘটা। এটা কেবল মাটি নয়, এটা মানব সভ্যতার নীরব স্থপতি।

মাটি হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের সঙ্গী হয়ে আছে। মুত্যুর পর অনেকের ঠাঁই হয় এই মাটিতে। মাটি দিচ্ছে খনিজ উপাদান, সূর্যালোক দিচ্ছে শক্তি আর জল দিয়ে উদ্ভিদ বানাচ্ছে নানান রকমের দানা শস্য, ফল, ফুল, শব্জী (চিত্র নং-১)। আমরা তা খাচ্ছি বেঁচে থাকার জন্য, সুস্থ থাকার জন্য।

চিত্র নং- ১: নানাবিদ ফসলে জীবনের জয়গান

 

আধুনিক যুগে আমরা কেবল মাটিকে ফসল উৎপাদনের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করছি। প্রায়শই যত্ন নিই না। আর এটিকে কৃত্রিম সার, কীটনাশক এবং কলকারখানার দূষিত বর্জ্য দিয়ে য়ে ভরিয়ে তুলছি। হত্যা করছি মাটিকে!

আমরা ভুলে যাই যে, মাটি একটি জীবন্ত সত্ত্বা- কোটি কোটি অনুজীব, ছত্রাক, জৈব পদার্থ এবং খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে এটি গঠিত। এর ব্যবহারে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই অত্যাবশ্যক। শুধু তার কাছ থেকে নিলে হবে না, তাকে দিতেও হবে।

মাটি শুধুমাত্র উদ্ভিদকে টিকিয়ে রাখে না। নানান রকমের সেবা দিয়ে আমাদেরকে টিকিয়ে রাখে। এটি সরাসরিভাবে খাদ্যের পুষ্টির পরিমাণকে প্রভাবিত করে। ফলে মানুষের স্বাস্থ্য, বুদ্ধিমত্তা এবং জীবনকালকে প্রভাবিত করে। 

স্বাস্থ্যকর ও উর্বর মাটি থেকে উৎপন্ন ফলমূল, শাকসবজি ও ধান-চাল পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করে এবং শরীরের উন্নতি ও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার আমাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভালো মানের মাটি থেকে উৎপাদিত পুষ্টিকর খাবার মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধি বিকাশে সহায়তা করে। তাইতো বলা হয়- মাটি যদি বন্ধা হয় তাহলে মানুষ কী টিকে থাকতে পারবে? বিজ্ঞান সমর্থিত উত্তরটি হল- না (Big No)

 

মাটির উর্বরতা: পুষ্টির গোপন রেসিপি

মাটির উর্বরতা শক্তি বুঝতে হলে এটিকে প্রকৃতির ভাণ্ডার হিসেবে ভাবুন। একটি উর্বর মাটিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে: নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, আয়োডিন, ইত্যাদি। 

অবশ্য জলের অভাব হলে এবং মাটিতে জৈব পদার্থ তথা অনুজীব সম্প্রদায়ের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। এদের উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে, মাটির পুষ্টিগুলি উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য হবে। উদ্ভিদের জন্য সহজলভ্য মানে আমদের দেহের জন্যও সহজলভ্য। 

যখন আপনি উর্বর মাটি থেকে উৎপাদিত আপেল বা কলা খান, তখন আপনি কেবল চিনি এবং ফাইবার খাচ্ছেন না; আপনি এমন কিছু গ্রহণ করছেন যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে এবং আপনার মস্তিষ্ককে জ্বালানি দেয়। 

উর্বর মাটি নিশ্চিত করে যে, আপনি প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি প্যাকেট পাচ্ছেন। অন্যদিকে ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি বা অনুর্বর মাটি যে খাবার উৎপন্ন করবে তা দেখতে একই রকম হতে পারে; কিন্তু পুষ্টির দিক থেকে ফাঁপা। 

উদাহরনস্বরূপ, অনুর্বর মাটি থেকে তৈরি টমেটোতে ভিটামিন-সি কম থাকে, কম প্রোটিনযুক্ত দানা শস্য উৎপাদিত হয়, এবং কম আয়রনযুক্ত স্পাইনাস শাক পাওয়া যায়। দীর্ঘ দিন ধরে এ ধরনে খাবার খেতে থাকলে লুকানো ক্ষুধার সৃষ্টি হয়। মানেটা হলো যে, ক্যালোরি আছে পর্যাপ্ত, কিন্তু পুষ্টির অভাব রয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ দুর্বল হয়ে যায়, কাজ কর্মে মন বসে না।

লুকানো ক্ষুধা বিশ্বব্যাপী ২ বিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করছে । এদের অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তারা দৈনিক যা খাচ্ছেন তা দিয়ে দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাচ্ছে না। সুতরাং, উর্বরতা কেবল একটি কৃষি শব্দ নয়- এটি মানব জীবনের একটি জৈবিক ভিত্তি।

 

মাটি-মস্তিষ্ক অক্ষ: বুদ্ধিমত্তার জন্য পুষ্টি

আমাদের সবচেয়ে পরিশীলিত অঙ্গ হলো মস্তিষ্ক যা সবচেয়ে বেশি পুষ্টির খাবারের জন্য ক্ষুধার্ত থাকে। গর্ভধারণ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মস্তিষ্কের জন্য আয়রন, জিঙ্ক, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ প্রয়োজন। এগুলি কোথা থেকে আসে? তা আসে মাটি থেকে। 

উর্বর মাটির ফসল থেকে প্রাপ্ত আয়রন রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। জিংক স্নায়ু সংক্রমণ, স্মৃতিশক্তি এবং সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করে। জিংকের ঘাটতিযুক্ত শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়শই শেখার সমস্যা সৃষ্টি হয়। 

মস্তিষ্কের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণকারী থাইরয়েড হরমোন (চিত্র নং- ২) এর জন্য আয়োডিন অত্যাবশ্যক। খাদ্যে আয়োডিনের ঘাটতি হলে গলগন্ড এবং মানসিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। প্রুন্স, লিমা বিন্স, স্ট্রবেরি, ক্রেনবেরি,পুঁই শাক, ইত্যাদিতে আয়োডিন আছে।

থাইরয়েড হরমোন হলো থাইরক্সিন (T4) এবং ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন (T3)। T4 মূলত নিষ্ক্রিয় থাকে বলে এগুলিকে প্রায়শই সম্মিলিতভাবে "থাইরয়েড হরমোন" বলা হয়। থাইরয়েড T4 নিঃসরণ করলে শরীরের কিছু অঙ্গ এটিকে T3 তে রূপান্তরিত করে। ফলে কোষ এবং বিপাক ক্রিয় প্রভাবিত হয়।

চিত্র নং- ২: থাইরয়েড হরমোন তৈরির চক্র 

 

থাইরয়েড ক্যালসিটোনিন নামক একটি হরমোনও নিঃসরণ করে যা দেহের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে ক্যালসিটোনিন "থাইরয়েড হরমোন" নামে গোষ্ঠীভুক্ত নয় এবং এটি T3 এবং T4 এর মতো শরীরের বিপাককে প্রভাবিত করে না।

তিল, মসুর, সূর্যমুখী, সম্পূর্ণ দানাদার ফসল, চিয়া বীজ, ইত্যাদিতে সেলেনিয়াম থাকে। এই সেলেনিয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমকে সহযোগীতা  করে নিউরনকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে েএবয় মস্তিষ্ক ভালো থাকে। তবে অনুর্বর মাটি মানে দুর্বল পুষ্টি। ফলে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। 

তেমনিভাবে জিঙ্কের ঘাটতিযুক্ত মাটি থেকে জন্মানো ফসল দিয়ে শিশুর মা এবং শিশুর উদর পূর্তি করলে শিশুর মস্তিষ্কঠিক মতো বিকশিত হয় না। এ ধরনের একজন শিশু স্কুলে যেতে পারে, কিন্তু তাদের শিখন ঘাটতি থেকে যায়। 

মাটি এবং জ্ঞানের মধ্যে এই যে অদৃশ্য সুতোর বন্ধন তাকে কখনো কখনো "মাটি-মস্তিষ্ক অক্ষ" বলা হয়। এই বাক্যাংশটি রূপক হলেও এটি তুলে ধরে যে, মানুষের বুদ্ধিমত্তা মূলত আমাদের পায়ের নীচের মাটিতে প্রোথিত।

 

মাটি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: অদৃশ্য ঔষধালয়

মাটি হলো প্রাকৃতিক ঔষধালয়। উর্বর মাটি উদ্ভিদকে গৌণ বিপাকীয় যৌগ তৈরি করতে উৎসাহিত করে। যেমন- পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো যৌগ যা উদ্ভিদকে কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা করে এবং মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকেও রক্ষা করে। ইমিউন বর্ধনকারি খাবারগুলো চিত্র নং- ৩ এ দেখানো হলো।

চিত্র নং- ৩: ইমিউন বর্ধনকারি খাবার

 

যখন আমরা উর্বর মাটিতে জন্মানো শাকসবজি, ভেষজ এবং দানা শস্য গ্রহণ করি তখন আমরা মূলত ওষুধ গ্রহণ করি। এই ফাইটোকেমিক্যালসগুলি:

কিন্তু যখন মাটি স্বাস্থ্যহীন ও অনুর্বর হয় তখন ফসলও দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের প্রাকৃতিকভাবে রোগ-বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সেই ফসল দিয়ে খাবার বানিয়ে খেলে মনুষ্য দেহের নিরাময় ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এর অর্থ হল আমরা যে খাবার খাই তা কম ঔষধি গুণসম্পন্ন- শুধুমাত্র জ্বালানি কাঠের মতো শক্তি সরবরাহ করে।

এর জন্যই দেখা যায় যে, জৈব মাটিতে উৎপাদিত ফসলের উপর নির্ভরশীল আদিবাসী কৃষক সম্প্রদায় দীর্ঘস্থায়ী রোগে কম ভোগে থাকে। পক্ষান্তরে শিল্পজাত কৃষি খাবার খেয়ে যারা জীবনযাপন করে তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি।

 

পৃথিবীতে প্রোথিত দীর্ঘায়ু

বিশ্বের কিছু অঞ্চলের মানুষ কেন অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে? "নীল জোন"- যেমন ওকিনাওয়া (জাপান), সার্ডিনিয়া (ইতালি) এবং নিকোইয়া (কোস্টারিকা) এর উপর গবেষণা দেখা গেছে যে, তারা স্থানীয় উর্বর মাটিতে উৎপাদিত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন।

অতএব, দীর্ঘায়ু কেবল চিকিৎসা অগ্রগতির উপর নির্ভর করে না। এটি উর্বর মাটি দিয়ে শুরু হয়, যা জীবন-সমৃদ্ধকারি খাদ্য উৎপাদন করে। তাছাড়া, খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে, অপুষ্টি এড়িয়ে বার্ধক্য এবং বার্ধক্যজনিত রোগগুলিকে উপশম করতে পারে

 

আধুনিক সংকট: মাটি যখন নীরব হয়ে যায়

মানুষের কার্যকলাপ মাটিকে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বন উজাড়, অতিরিক্ত চাষ, রাসায়নিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মাটির জীবনীশক্তি কেড়ে নিচ্ছে। পরিবেশগত, জেনেটিক এবং মাটির উর্বরতা নষ্টের কারণে গত ৫০ থেকে ৭০ বছরে আপেল, কমলা, আম, পেয়ারা, কলা, টমেটো এবং আলুর মতো ফসলের পুষ্টির ঘনত্ব ২৫-৫০% বা তার বেশি কমে গেছে

পুষ্টির এই পতন নীরবে মানব সমাজকে দুর্বল করে দিচ্ছে। আজকের অপুষ্টি কেবল ক্ষুধা নিয়ে নয়- এটি আমাদের প্রতিদিনের খাবারের পুষ্টির হ্রাস নিয়ে। অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে শিশুরা খাটো হয়, প্রাপ্তবয়স্করা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিতে ভুগে এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠী ডিমেনশিয়া, হৃদরোগ এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।

 

আমাদের দেহের কতভাগ পুষ্টি উদ্ভিদজাত খাবার খেয়ে পূর্ণ হয়?

গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমাদের দৈনিক পুষ্টির প্রায় ৭০-৮০% বা তারও বেশি অংশ আসে উদ্ভিদজাত খাবার থেকে। এই খাবারই মূলত আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ইত্যাদি সরবরাহ করে।

আমরা যদি বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, ও দানাদার খাবার গ্রহণ করি তবে আমাদের দেহের অনেক পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়। তবে প্রোটিনের জন্য কিছু ক্ষেত্রে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, মূলত উদ্ভিদজাত খাবার আমাদের দেহের পুষ্টির বড় অংশের যোগান দেয়।

 

মাটির স্বাস্থ্য উদ্ধার মানে নিজেদের স্বাস্থ্যের নিরাময়

এখনো আশা আছে। পুনরুৎপাদনশীল কৃষি- কম্পোস্ট তৈরি, আবরণ ফসল, কৃষি-বনায়ন, রাসায়নিক ব্যবহার হ্রাস, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, মাটির দূষণরোধ  এবং জীবাণু পুনরুদ্ধারের উপর ভিত্তি করে মাটিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। মাটি পুনরুদ্ধার করা হলে নিম্নলিখিত সুবিধাদি পাওয়া সম্ভব:

  • খাদ্যে পুষ্টির ঘনত্ব ফিরে আসে
  • লুকানো ক্ষুধা থেকে মুক্তি
  • মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা এবং আয়ুস্কাল বাড়ে

তাই সমীকরণটি খুবই সহজ: সুস্থ মাটি = সুস্থ মানুষ = একটি সুস্থ গ্রহ

মাটি নিরাময়ের মাধ্যমে আমরা কেবল কৃষিকেই বাঁচাচ্ছি না - আমরা নিজেদেরকেও বাঁচাচ্ছি।

 

FAQs

মাটিকে কেন মানুষের স্বাস্থ্যের ভিত্তি বলা হয়?

কারণ এটি আমাদের খাদ্য এবং দেহের জন্য পুষ্টি এবং খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে।

 

মাটির উর্বরতা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

উর্বর মাটি জিঙ্ক, আয়োডিন এবং আয়রন সরবরাহ করে যা স্মৃতিশক্তি, শেখার এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়োজনীয়।

 

মাটির উর্বরতা হ্রাস পেলে কী ঘটে?

শস্য ক্যালোরি সমৃদ্ধ কিন্তু পুষ্টির অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি খাদ্য-সুরক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও "লুকানো ক্ষুধা" দেখা দেয়।

 

মাটির স্বাস্থ্য কি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে?

হ্যাঁ। অনুর্বর মাটি বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের সাথে সম্পর্কিত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 

মাটি থেকে কোন খনিজ পদার্থ দীর্ঘায়ুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক যা হৃদপিণ্ড, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক।

 

নীল জোন কী এবং এগুলি মাটির সাথে কীভাবে যুক্ত?

এগুলি হলো উচ্চ আয়ুষ্কালসম্পন্ন অঞ্চল। প্রায়শই উর্বর জৈব মাটিতে জন্মানো খাবার গ্রহণ করে মানুষ দীর্ঘায়ূ হতে পারে।

 

মাটির অবক্ষয় কীভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলবে?

পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্যের অভাব শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত করবে, বিলম্বিত বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ বা বুদ্ধিমান না হওয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে।

 

আধুনিক কৃষিকাজ কি মাটির উর্বরতা পুনরুদ্ধার করতে পারে?

হ্যাঁ, জৈব সংশোধন, ডালজাতীয় ফসল অন্তর্ভূক্তিসহ ফসলের আবাদ, জৈব সারের ব্যবহার এবং কম রাসায়নিকের ব্যবহার মাটির স্বাস্থ্যকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

 

মানুষের স্বাস্থ্যে মাটির অনুজীব কী ভূমিকা পালন করে?

অনুজীব উদদ্ভিদের প্রয়োজনীয খনিজ এবং যৌগসমূহ সহজলভ্য করে উদ্ভিদকে সমৃদ্ধ করে, যা খেলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপকে শক্তিশালী হয়।

 

উপসংহার

মাটি আমাদের জীবনের মূল ভিত্তি। মাটির উপাদান থেকে উৎপন্ন ফসল আমাদের পুষ্টির চাহিদার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ পূরণ করে। পাশাপাশি মানব বুদ্ধি ও শারীরিক বিকাশে বিশেষ অবদান রাখে। সুতরাং আমাদের উচিৎ মাটির প্রতি সম্মান দেখানো ও যত্ন নেওয়া; সঠিকভাবে চাষাবাদ ও পরিবেশ রক্ষা করে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করা।

মাটি, ফসল, পুষ্টি ও মস্তিষ্কের মধ্যে সমতা বা সাম্যাবস্থা অপরিহার্য। এই সমতা না থাকলে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়। তাই, মাটি, ফসল ও পুষ্টির সঙ্গে মানসিক উন্নয়নের সমন্বয় জরুরি। নয়তো অপ্রতুলতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়ে বিপর্যয় নেমে আসবে।