আচ্ছা বলুনতো সৌরজগতে কতগুলো চাঁদ আছে? আমি জানতাম মাত্র একটি- যাকে ডেকে ডেকে মা আমাকে ঘুম পাড়াতো ছোটকালে (চিত্র নং- ১)। এতোকাল আমি ভুল জেনে এসেছি! অনেক চাঁদ আছে আমাদের সৌরজগতে। তবে চাঁদের বুড়ি এখন আর সুতো কাটে না।
চিত্র নং- ১: আমাদের পরিচিত চাঁদ
২৫শে মার্চ, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত আমাদের সৌরজগতে ৮৯১টিরও বেশি চাঁদের অস্তিত্ত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। পৃথিবীর চাঁদ ছাড়াও ৪২২টি চাঁদ বিভিন্ন গ্রহের কক্ষপথে ঘুরছে। ৪৭০টিরও বেশি চাঁদ বামন গ্রহ, গ্রহাণু এবং ট্রান্স-নেপচুনিয়ান বস্তুসমূহকে (TNOs) প্রদক্ষিণ করছে। TNOs হলো সৌরজগতের এমন বস্তুসমূহ যাদের কক্ষপথ নেপচুনের বাইরে অবস্থিত।
কোন গ্রহের কতটি চাঁদ আছে?
সবচেয়ে বেশি চাঁদ আছে শনি গ্রহের- ২৭৪টি, বৃহস্প্রতির ৯৭টি, ইউরেনাসের ২৮টি, নেপচুনের ১৬টি, বামন গ্রহ প্লূটোর ৫টি, মঙ্গল গ্রহের ২টি, আর পৃথিবীর আছে মাত্র একটি চাঁদ।
চাঁদের আকার, আকৃতি ও বৈশিষ্ট কেমন?
চাঁদ বিভিন্ন আকার, আকৃতি এবং প্রকারের হয়। এদেরকে গ্রহের উপগ্রহও বলা হয়। চাঁদগুলি সাধারণত কঠিন বস্তু এবং খুব কম সংখ্যকেরই বায়ুমণ্ডল আছে।
চাঁদের নামকরন কেমন করে কর হয়?
আধুনিক যুগে আবিষ্কৃত প্রতিটি চাঁদেকে প্রথমে একটি সংখ্যা দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, S/2009 S1 (প্রোপেলার মুনলেট) ২০০৯ সালে আবিষ্কৃত শনি গ্রহের প্রথম উপগ্রহ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাঁদগুলির একটি সরকারী নামকরণ করা হয়। আমাদের সৌরজগতের বেশিরভাগ চাঁদের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতির পৌরাণিক চরিত্রদের নামে।
উদাহরণস্বরূপ, শনি গ্রহের নব আবিষ্কৃত নতুন চাঁদগুলির নামকরণ করা হয়েছে নর্স পুরাণে (Norse mythology) বর্ণিত চরিত্র অনুযায়ী। বার্গেলমির (Bergelmir) তাদের মধ্যে একটি দৈত্যাকার উপগ্রহ। তবে ইউরেনাসের বেলায় ব্যতিক্রম করা হয়েছে। ইউরেনাসের চাঁদগুলির নামকরণ করা হয়েছে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটকের চরিত্রগুলোর মতো করে। যেমন- ওফেলিয়া (Ophelia) এবং পাক (Puck)। ইউরেনাসের চাঁদের নামকরন করা হয়েছে আলেকজান্ডার পোপের কবিতা অনুযায়ী বেলিন্ডা (Belinda) এবং এরিয়েল (Ariel)।
এতক্ষন পর্যন্ত চাঁদের প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। প্রত্যেকটি চাঁদের তার নিজস্ব আকার, আকৃতি ও অনন্য বৈশিষ্ট রয়েছে। সবগুলো নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয় বিধায় নির্বাচিত কয়েকটি চাঁদ নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের চাঁদ: আমাদের চাঁদ
পৃথিবী থেকে চাঁদ প্রায় ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে মুশকিল হলো চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, প্রতি বছর প্রায় এক ইঞ্চি করে। চাঁদ না থাকেলে পৃথিবীর কী হবে?
চাঁদের ব্যাসার্ধ হলো প্রায় ১,৭৪০ কিলোমিটার, ক্ষেত্রফল প্রায় ৩৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, ভর প্রায় ৭৩৭৩০৮৬৪১৯৮ বিলিয়ন টন, আয়তন প্রায় ২১৬৬০০০০০০০ ঘন কিলোমিটার এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রতি সেকেন্ডে ১.৬২৫ মিটার। পৃথিবী ও চাঁদের সাইজের তুলনা চিত্র নং- ২ এ দেখানো হলো।
পৃথিবীর চাঁদ কেমন করে তৈরি হলো?
কয়েক বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি বস্তু পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের পর সম্ভবত চাঁদের উৎপত্তি হয়েছিল। সংঘর্ষের পর ধ্বংসাবশেষ জমা হয়ে চাঁদটি তৈরি হয় প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে।
নবগঠিত চাঁদটি গলিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু প্রায় ১০ কোটি বছরের মধ্যে "ম্যাগমা মহাসাগর" এর বেশিরভাগ অংশ স্ফটিকাকার ধারণ করে। কম ঘনত্বের শিলা উপরের দিকে ভাসছিল এবং অবশেষে চন্দ্র ভূত্বক তৈরি হয়।
পৃথিবীর চাঁদের গঠন
পৃথিবীর চাঁদের একটি কেন্দ্র, ম্যান্টল এবং উপরিত্বক রয়েছে (চিত্র নং- ২ক)। চাঁদের কেন্দ্র অন্যান্য স্থলজ বস্তুর কেন্দ্রের তুলনায় আনুপাতিকভাবে ছোট। কঠিন ও লোহা সমৃদ্ধ অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রটির ব্যাসার্ধ ২৪০ কিলোমিটার, যা ৯০ কিলোমিটার পুরু একটি তরল লোহার খোল দ্বারা বেষ্টিত। লোহার কেন্দ্রকে ঘিরে একটি আংশিক গলিত স্তর রয়েছে (চিত্র নং- ২খ)।
চিত্র নং- ২: (ক) পৃথিবী ও চাঁদের তুলনা এবং চাঁদের গঠন
আংশিক গলিত স্তরের উপর থেকে চাঁদের উপরিস্তরের নীচ পর্যন্ত অংশটি হলো মেন্টল। এটি সম্ভবত অলিভাইন এবং পাইরোক্সিনের মতো খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি। খনিজগুলো ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, সিলিকন এবং অক্সিজেন পরমাণু দিয়ে তৈরি।
চাঁদের নিকটবর্তী গোলার্ধে ভূত্বকটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার পুরু এবং দূরবর্তী গোলার্ধে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পুরু। এটি অক্সিজেন, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, ক্যালসিয়াম এবং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি। আরো আছে অল্প পরিমাণে টাইটানিয়াম, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, পটাসিয়াম এবং হাইড্রোজেন।
পৃথিবীর চাঁদের কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে যে গতিতে ঘুরছে (যাকে সিঙ্ক্রোনাস ঘূর্ণন বলা হয়)। তাই একই গোলার্ধ সর্বদা পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে। চাঁদ যখন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তখন বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময়ে সূর্যের আলো বা অন্ধকারে থাকে।
আমরা কেন চাঁদকে বিভিন্ন রকমভাবে আলোকিত হতে দেখি? শুক্লপক্ষে পূর্ণিমার সময় পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের যে গোলার্ধটি দেখতে পাই তা সূর্য দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আলোকিত হয়। পক্ষন্তরে, অমাবস্যা তখন ঘটে যখন চাঁদের দূরবর্তী অংশে পূর্ণ সূর্যালোক থাকে এবং আমাদের পাশে থাকে নিকশ কালো।
চাঁদ প্রতি ২৭.৩২ দিন অন্তর পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে এবং একই গতিতে অথবা একই সময়ে নিজেও ঘুরে। যেহেতু পৃথিবীও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে এবং তার অক্ষের উপর ঘুরছে, তাই আমাদের দৃষ্টিতে চাঁদ প্রতি ২৯ দিনে আমাদের কক্ষপথে আবর্তন করছে বলে মনে হয়।
পৃথিবীর চাঁদের পৃষ্ঠতল/উপরের স্তর
অত্যন্ত বিরল বায়ুমণ্ডলের কারণে, চাঁদের পৃষ্ঠে গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড এবং ধূমকেতুর অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়। ফলে অসংখ্য গর্ত তৈরি হয় এবং কোন কোনটি বেশ বড়। যেমন- টাইকো গর্তটি ৮৫ কিলোমিটার প্রশস্ত।
কোটি কোটি বছর ধরে এই ধরনের আঘাতের ফলে চাঁদের পৃষ্ঠে বিশাল পাথর ও ধূলো জমা হয়েছে। প্রায় পুরো চাঁদই কাঠকয়লার মতো ধূসর, গুঁড়ো ধুলো এবং পাথুরে ধ্বংসাবশেষের স্তূপে ঢাকা যাকে চন্দ্র রেগোলিথ (পাথরের কম্বল বলা যেতে পারে)। এর নীচে মেগারেগোলিথ নামে ভাঙা শিলার একটি অঞ্চল রয়েছে।
চাঁদের আলোকিত অঞ্চলগুলিকে উচ্চভূমি বলা হয়; আর অন্ধকার অঞ্চলগুলিকে মারিয়া (সমুদ্রের ল্যাটিন নাম) বলা হয়। এই অববাহিকাগুলি ৪.২ থেকে ১.২ বিলিয়ন বছর আগে লাভা দিয়ে পূর্ণ ছিল।
আলোকিত এবং অন্ধকার অঞ্চলগুলি বিভিন্ন ধরণের গঠন এবং যুগের শিলাকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রমাণ দেয় কীভাবে প্রাথমিক ভূত্বকটি চন্দ্র ম্যাগমা মহাসাগর থেকে স্ফটিকায়িত হয়েছিল। কোটি কোটি বছর ধরে সংরক্ষিত গর্তগুলি চাঁদ এবং অভ্যন্তরীণ সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে তার সাক্ষ্য দেয়। পূর্ণ সূর্যের আলোয় চাঁদের তাপমাত্রা প্রায় ১২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়; কিন্তু অন্ধকারে তাপমাত্রা নেমে যায় প্রায় -১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আমাদের চাঁদে কী পানি আছে?
চাঁদের প্রাথমিক অনুসন্ধানের সময় এবং অ্যাপোলো এবং লুনা মিশন থেকে ফিরে আসা সমস্ত নমুনার বিশ্লেষণের সময় মনে হয়েছিল চাঁদের পৃষ্ঠ শুষ্ক। তবে ২০০৮ সালে ভারতীয় মিশন চন্দ্রযান-১ দ্বারা জলের প্রিমাণ নিশ্চিত আবিষ্কার করা হয়। এই পরীক্ষায় চাঁদের পৃষ্ঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এবং মেরুতে ঘনীভূত হাইড্রোক্সিল অণু সনাক্ত হয়।
লুনার প্রসপেক্টর, এলসিআরওএসএস (LCROSS) এবং লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটারের মতো মিশনগুলি কেবল চাঁদের পৃষ্ঠে জলের উপস্থিতি প্রমাণ করেনি; বরং চন্দ্র মেরুগুলিতে স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত অঞ্চলে অধিক পরিমাণে বরফ জলের প্রমাণ পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে উল্কাবৃষ্টির সময় চাঁদ থেকে জল নির্গত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন যে, যখন চাঁদে মাইক্রোমেটিওরয়েডের বোমাবর্ষণ হয় তখন চাঁদের পৃষ্ঠ জল নির্গত করে।
২০২০ সালের অক্টোবরে নাসার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি (SOFIA) প্রথমবারের মতো চাঁদের সূর্যালোকিত পৃষ্ঠে জলের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে। এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে, জল চন্দ্র পৃষ্ঠ জুড়ে ছড়িয়ে থাকতে পারে; কেবল মাত্র ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত স্থানে সীমাবদ্ধ নয়।
চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান বৃহত্তম গর্তগুলির মধ্যে একটি হলো ক্ল্যাভিয়াস ক্রেটার। এই ক্ল্যাভিয়াস ক্রেটার জলের অণু (H2O) সনাক্ত করেছে SOFIA।
পৃথিবীর চাঁদের বায়ুমণ্ডল
চাঁদের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা এবং দুর্বল। এটি সূর্যের বিকিরণ বা উল্কাপিণ্ডের প্রভাব থেকে কোনও সুরক্ষা প্রদান করে না।
চৌম্বকমণ্ডল
প্রাচীন চাঁদে হয়তো একটি অভ্যন্তরীণ ডায়নামো তৈরি হয়েছিল, যা স্থলজ গ্রহের জন্য বৈশ্বিক চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরির প্রক্রিয়ামতো। কিন্তু বর্তমানে চাঁদের একটি অত্যন্ত দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে।
পৃথিবীর চাঁদে জীবনের সম্ভাবনা কতটুকু?
চাঁদে অন্বেষণ করা অনেক অভিযানের ফলে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, এতে কোন জীবন আছে। তবে ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষের উপনিবেশ স্থাপন হতে পারে।
২. বৃহস্প্রতির চাঁদ
বৃহস্পতির চারটি বৃহত্তম উপগ্রহ আবিষ্কার হলো পৃথিবীর বাইরের জগতের প্রথম উপগ্রহ (চিত্র নং- ৩)। ইতালীয় জ্যোতির্বিদ গ্যালিলিও গ্যালিলির নামানুসারে এগুলিকে গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ বলা হয়। তিনি ১৬১০ সালে উপগ্রহগুলো আবিষ্কার করেন। বৃহস্প্রতির ৯৭টি চাঁদ থাকলেও এখানে ২টি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
চিত্র নং- ৩: বৃস্প্রতির চারটি চাঁদের তুলানমূক অবস্থান
২.১ গ্যানিমেড (Ganymede) চাঁদ
বৃহস্পতির বরফের চাঁদ গ্যানিমেড আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ (চিত্র নং- ৪)। এটি বুধ গ্রহ এবং বামন গ্রহ প্লূটোর চেয়েও বড়। এটি পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১.৫ গুণ বড়। গ্যানিমেড চাঁদের ব্যাস হলো প্রায় ৫২৬০ কিলোমিটার এবং প্রায় এক মিলিয়ন দূরে থেকে বৃহস্প্রতি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে।
গ্যানিমেডে একটি ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত জলের সমুদ্র রয়েছে যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের সমস্ত জলের চেয়েও বেশি জল ধারণ করতে পারে বলে দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে। এমনকি বরফ এবং মহাসাগরগুলি ক্লাব স্যান্ডউইচের মতো বিভিন্ন স্তরে স্তূপীকৃত থাকতে পারে।
গ্যানিমেড চাঁদের ভর বুধ গ্রহের ভরের প্রায় অর্ধেক; তরে ব্যাস বুধ গ্রহের চেয়ে বেশি। চাঁদটির ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম, যা ইঙ্গিত দেয় যে, এটি শিলা এবং বরফ দিয়ে তৈরি। এছাড়াও, গ্যালিলিও থেকে প্রাপ্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এতে তরল লোহা সমৃদ্ধ কোর রয়েছে।
গ্যানিমেডই হলো একমাত্র চাঁদ যার নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে। চৌম্বক ক্ষেত্র চাঁদের মেরুগুলিকে ঘিরে অরোরা বা উজ্জ্বল গ্যাসের ফিতা তৈরি করে। এর বৈশ্বিক ভূতাত্ত্বিক এবং মোজাইক চিত্রের রূপ চিত্র নং- দেখানো হলো।
চিত্র নং- ৪: গ্যানিমেডে অরোরা দেখা যাচ্ছে এবং বৈশ্বিক ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র এবং বৈশ্বিক মোজাইক বৈচিত্র
গ্যানিমেডের পৃষ্ঠের খাড়া শৈলশিরা তুলনামূলকভাবে সমতল ও মসৃণ অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত (চিত্র নং ৫)। বিজ্ঞানীদের মতে এই দাগগুলি বরফের আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত তরল পদার্থের ফলে তৈরি। কিন্তু পৃষ্ঠের তাপমাত্রা যেহেতু খুবই কম তাহলেতো সেখানে তরল পদার্থ থাকতে পারে না। এমন অবস্থায় এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে।
চিত্র নং- ৫: গ্যানিমেড চাঁদের উপরের স্তরের বৈশিষ্ট
২.২ ক্যালিস্টো চাঁদ
ক্যালিস্টো হল বৃহস্পতির দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ এবং আমাদের সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ (চিত্র নং- ৬)। অতীতে কিছু বিজ্ঞানী ক্যালিস্টোকে একঘেয়ে "কুৎসিত হাঁসের বাচ্চা চাঁদ" এবং "পাথর ও বরফের একটি অংশ" হিসেবে ভাবতেন। কারণ গর্ত-আচ্ছাদিত পৃথিবীতে খুব বেশি কিছু ঘটছে বলে মনে হয়নি; কোনও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বা স্থানান্তরিত টেকটোনিক প্লেট নেই।
১৯৯০ এর দশকে নাসার গ্যালিলিও মহাকাশযানের তথ্য থেকে জানা গেছে যে, ক্যালিস্টোরে একটি গোপন রহস্য থাকতে পারে। ধরে নেয় হয় এর উপরিস্তরের নীচে একটি লবণাক্ত সমুদ্র আছে। এই আবিষ্কারের ফলে একসময়ের মৃত বলে মনে হওয়া ক্যলিস্টো চাঁদে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন তালিকায় স্থান পেয়েছে।
চিত্র নং- ৬: ক্যালিস্টো চাঁদ
ক্যালিস্টো নাম কেমন করে হলো
ক্যালিস্টো ৭ জানুয়ারী, ১৬১০ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি বৃহস্পতির আরও তিনটি বৃহত্তম উপগ্রহ: গ্যানিমেড, ইউরোপা এবং আইয়ো এর সাথে আবিষ্কার করেছিলেন। গ্রীক পুরাণে জিউস কর্তৃক ভালুক হয়ে ওঠা এক মহিলার নামানুসারে ক্যালিস্টো নামকরণ করা হয়েছে।
আকার এবং দূরত্ব
ক্যালিস্টো বৃহস্পতির দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ এবং এটি আমাদের সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ। এটি প্রায় বুধের সমান। বিষুবরেখায় ক্যালিস্টোর পরিধি প্রায় ১৫,১৪৪ কিলোমিটার। ক্যালিস্টো বৃহস্পতি থেকে প্রায় ১,৮৮৩,০০০ কিলোমিটার দূরে এবং বৃহস্পতি আমাদের সূর্য থেকে প্রায় ৭৭৮ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে প্রদক্ষিণ করে।
ক্যালিস্টোর কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
বৃহস্পতিকে একবার ঘুরতে ক্যালিস্টোর প্রায় ১৬.৬৯ দিন সময় (পৃথিবীর ২৪ ঘন্টার হিসাবে) লাগে। ক্যালিস্টো জোয়ারভাটা অনুসারে বৃহস্পতির সাথে আবদ্ধ। অর্থাৎ ক্যালিস্টোর একটি দিক সর্বদা বৃহস্পতির দিকে মুখ করে থাকে। এটি ১৮৮৩০০০ কিলোমিটার দূরে থেকে বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে।
বৃহস্পতি গ্রহটি সূর্য থেকে গড়ে প্রায় ৭৭৮.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। যেহেতু বৃহস্পতির চাঁদগুলো মূলত এই গ্রহের চারপাশে ঘোরে, তাই তারা বৃহস্পতির কাছাকাছিই থাকে। কিন্তু গ্রহের অবস্থান পরিবর্তিত হওয়ায় চাঁদগুলোর দূরত্বও ভিন্ন হয়। বৃহস্পতি এবং এর সমস্ত উপগ্রহ সূর্যেকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় হিসেবে প্রায় ১২ বছর সময় লাগে।
ক্যালিস্টো চাঁদ কেমন করে তৈরি হলো?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন ক্যালিস্টো এবং বৃহস্পতির অন্যান্য উপগ্রহগুলি বৃহস্পতির গঠন হওয়ার পর অবশিষ্টাংশ পদার্থ নিয়ে ডিস্কে গঠিত হয়।
ক্যালিস্টো চাঁদের গঠন
ক্যালিস্টোর একটি বরফের পৃষ্ঠ রয়েছে, যা বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির গর্ত দ্বারা আবৃত। যেমন- এতে আছে বাটি আকৃতির এবং একাধিক বলয়যুক্ত গর্ত। গ্যালিলিও মহাকাশযানের সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায় যে, ক্যালিস্টোর ভূপৃষ্ঠের ২৫০ কিলোমিটার নীচে সমুদ্র থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।
যদি কোন মহাসাগর থাকে তবে এটি পাথরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করছে। ফলে এটা ধরে নেয়া যায় যে, এই চাঁদে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। ক্যালিস্টোর অভ্যন্তরে শিলা এবং ধাতুর সাথে মিশ্রিত বরফের স্তর থাকতে পারে, যা সম্ভবত এর কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত।
ক্যালিস্টোর উপরের স্তর
ক্যালিস্টোর পাথুরে বরফের পৃষ্ঠটি আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সবচেয়ে ভারী গর্তযুক্ত। এই চাঁদের পৃষ্ঠটি প্রায় ৪ বিলিয়ন বছরের পুরানো এবং এটি সম্ভবত ধূমকেতু এবং গ্রহাণু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
যেহেতু গভীর গর্তগুলি এখনও দৃশ্যমান; বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই চাঁদের ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়কলাপ খুব কম। কোনও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বা টেকটোনিক স্থানান্তর নেই যা গর্তগুলিকে ক্ষয় করে। ক্যালিস্টো দেখতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উজ্জ্বল সাদা বিন্দু মতো। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এগুলো হলো জলের বরফ দিয়ে আবৃত গর্তের শিখর।
ক্যালিস্টোর বায়ুমণ্ডল
১৯৯৯ সালে বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করেছিলেন যে, গ্যালিলিও মহাকাশযান ১৯৯৭ সালে পর্যবেক্ষণের সময় ক্যালিস্টোতে একটি অত্যন্ত পাতলা কার্বন ডাই অক্সাইড এক্সোস্ফিয়ার, মানে একটি অত্যন্ত পাতলা বায়ুমণ্ডল সনাক্ত করেছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, ক্যালিস্টোর এক্সোস্ফিয়ারে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনও রয়েছে।
ক্যালিস্টোতে জীবনের সম্ভাবনা কতটুকু?
পৃথিবীর বাইরে আমাদের সৌরজগতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে এমন সম্ভাব্য স্থানের তালিকায় ক্যালিস্টো রয়েছে। একটি লবণাক্ত সমুদ্রের উপস্থিতি এবং এক্সোস্ফিয়ারে অক্সিজেনের উপস্থিতি এমন আশা জাগাচ্ছে।
৩. মঙ্গলের চাঁদ
সৌরজগতের মধ্যে মঙ্গলের চাঁদগুলো সবচেয়ে ছোট। ফোবোস ডেইমোসের চেয়ে একটু বড় এবং মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৬,০০০ কিলোমিটার উপরে প্রদক্ষিণ করে। এটি দিনে তিনবার মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরতে থাকে, অন্যদিকে আরও দূরবর্তী ডেইমোস প্রতিটি কক্ষপথে ৩০ ঘন্টা সময় নেয়।
ফোবোস ধীরে ধীরে ভেতরে সর্পিল হয়ে উঠছে, প্রতি শতাব্দীতে গ্রহের প্রায় ছয় ফুট (১.৮ মিটার) কাছাকাছি চলে আসছে। ৫ কোটি বছরের মধ্যে, এটি হয় মঙ্গল গ্রহের সাথে ধাক্কা খাবে অথবা ভেঙে যাবে এবং গ্রহের চারপাশে একটি বলয় তৈরি করবে।
৩.১ মঙ্গলের ফোবোস চাঁদ
মঙ্গল গ্রহের দুটি চাঁদের মধ্যে ফোবোস বড় (চিত্র নং- ৭) এবং এর ২৭ x ২২ x ১৮ কিলোমিটার। এটি দিনে তিনবার মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে এবং গ্রহের পৃষ্ঠের এত কাছে অবস্থিত যে মঙ্গলের কিছু স্থানে এটি সবসময় দেখা যায় না।
ফোবোসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল স্টিকনি ক্রেটার, যা গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ আসাফ হলের স্ত্রী ক্লো অ্যাঞ্জেলিন স্টিকনি হলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আসাফ হল ১৮৭৭ সালে লাল গ্রহের দুটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন।
ফোবোস ধীরে ধীরে সর্পিলাকার হয়ে উঠছে। এটি প্রতি শতাব্দীতে মঙ্গল গ্রহের প্রায় ১.৮ মিটার করে কাছাকাছি চলে আসছে। ফলে ৫ কোটি বছরের মধ্যে, এটি হয় মঙ্গল গ্রহের সাথে ধাক্কা খাবে অথবা ভেঙে যাবে এবং গ্রহের চারপাশে একটি বলয় তৈরি করবে।
ফোবোস মঙ্গল গ্রহের সাথে সংঘর্ষের পথে রয়েছে। এটি প্রতি শত বছরে ছয় ফুট (১.৮ মিটার) হারে মঙ্গলের কাছাকাছি আসছে। এই হারে, চাঁদ হয় ৫ কোটি বছরে মঙ্গল গ্রহের সাথে ধাক্কা খাবে অথবা ভেঙে একটি বলয়ে পরিণত হবে।
চিত্র নং- ৭: ফোবোস ও স্টিকনি ক্রেটার
ফোবোস সি-টাইপ শিলা দিয়ে গঠিত বলে মনে হয়, যা কালো রঙের কার্বনেসিয়াস কনড্রাইট গ্রহাণুর মতো। মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ারের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায় যে, এই ক্ষুদ্র চাঁদের পৃষ্ঠটি যুগ যুগ ধরে উল্কাপিণ্ডের আঘাতে গুঁড়ো হয়ে গেছে, যার মধ্যে কিছু ভূমিধসের বিশাল গর্তের খাড়া ঢাল অন্ধকার পথ তৈরি করেছে। ফোবোসের তাপমাত্রা -৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -১১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। ফোবোসের কোনও বায়ুমণ্ডল নেই।
৪. শনির চাঁদ
শনির কক্ষপথে ২৭৪টি চাঁদ রয়েছে, যা আমাদের সৌরজগতের অন্য যেকোনো গ্রহের চেয়ে অনেক বেশি। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা শনির চারপাশে ১২৮টি ছোট চাঁদ আবিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এখানে মাত্র কয়েকটি চাঁদের ছবি দেখানো হলো (চিত্র নং- ৮)
চিত্র নং- ৮: শনি গ্রহের রিং ও তার চাঁদ
৪.১ টাইটান
টাইটান হল শনির একটি বৃহত্তম উপগ্রহ এবং সৌরমন্ডলের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ (চিত্র নং- ৯)। এটি একটি বরফের পৃথিবী যার পৃষ্ঠটি সোনালী ধোঁয়াশাচ্ছন্ন বায়ুমণ্ডল দ্বারা আবৃত। টাইটান পৃথিবীর চাঁদের চেয়েও বড় এবং এমনকি বুধ গ্রহের চেয়েও বড়।
এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যার বায়ুমণ্ডল ধর্তব্যে নেয়ার মতো। পৃথিবী ছাড়াও টাইটানই হলো একমাত্র স্থান যেখানে তরল পদার্থ রয়েছে। এখানে মেঘ, বৃষ্টি, নদী, হ্রদ এবং সমুদ্র রয়েছে।
চিত্র নং- ৯: টাইটান চাঁদ
টাইটানের বায়ুমণ্ডল মূলত নাইট্রোজেন এবং অল্প পরিমাণে মিথেন দ্বারা গঠিত। সৌরজগতের এটিই একমাত্র স্থান যেখানে মেঘ থেকে বর্ষিত তরল পদার্থের একটি চক্র যা এর পৃষ্ঠ জুড়ে প্রবাহিত হয়, হ্রদ এবং সমুদ্র ভরাট করে এবং আকাশে ফিরে যায়। টাইটানের ভূপৃষ্ঠের নীচে জলের একটি সমুদ্রও রয়েছে বলে মনে করা হয়।
টাইটানের নামকরণ
ডাচ জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস ১৬৫৫ সালের ২৫শে মার্চ টাইটান আবিষ্কার করেন। হাইগেনস তার আবিষ্কারের নাম দেন "লুনা স্যাটার্নি", যার ল্যাটিন অর্থ শনির চাঁদ। টাইটান নামটি এসেছে জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেলের পুত্র জন হার্শেলের নাম থেকে। টাইটান নামটি গ্রীক পুরাণ থেকে এসেছে।
টাইটানের আকার এবং দূরত্ব
টাইটানের ব্যাসার্ধ প্রায় ২,৫৭৫ কিলোমিটার। টাইটান শনি থেকে প্রায় ১.২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা নিজেই সূর্য থেকে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। সূর্য থেকে আলো টাইটানে পৌঁছাতে প্রায় ৮০ মিনিট সময় লাগে। শনি এবং টাইটানে সূর্যের আলো পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ কম।
টাইটানের কক্ষপথ এবং ঘূর্ণন
শনির পূর্ণ কক্ষপথে টাইটানের ১৫ দিন ২২ ঘন্টা সময় লাগে। টাইটানও জোয়ারভাটায় শনির সাথে সমকালীন ঘূর্ণনে আবদ্ধ। টাইটানও সর্বদা শনি গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করার সময় একই মুখ দেখায়।
সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর দিন হিসেবে শনির লাগে প্রায় ২৯ বছর। শনির ঘূর্ণনের অক্ষ পৃথিবীর মতোই হেলে থাকে। ফলে ঋতু বৈচিত্র দেখা দেয়। তবে শনির এক বছর যেহেতু অনেক দীর্ঘ, তাই এর প্রতিটি ঋতুর দৈর্ঘ্য পৃথিবীর সাত বছরের চেয়েও বেশি সময় ধরে স্থায়ী।
টাইটানের গঠন
টাইটানের অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পূর্ণরূপে জানা যায়নি। তবে ক্যাসিনি-হাইজেনস মিশনের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি মডেল থেকে জানা যায় যে টাইটানের পাঁচটি প্রাথমিক স্তর রয়েছে (চিত্র নং- ১০)। সবচেয়ে ভেতরের স্তরটি পাথর দিয়ে তৈরি (বিশেষ করে জল বহনকারী সিলিকেট শিলা) যার ব্যাস প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার।
চিত্র নং- ১০: টাইটানের অভ্যন্তরীণ গঠন দেখানো হয়েছে
কেন্দ্রের চারপাশে জলীয় বরফের একটি আবরণ রয়েছে। একটি বিশেষ ধরণের বরফ-VI, যা শুধুমাত্র অত্যন্ত উচ্চ চাপে তৈরি হয়। উচ্চ-চাপের বরফ স্তরটি লবণাক্ত তরল জলের একটি স্তর দ্বারা বেষ্টিত থাকে, যার উপরে জলীয় বরফের একটি বাইরের আবরণ আছে।
বাইরের আবরণটি জৈব অণু দ্বারা আবৃত থাকে যা বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে এসেছে বা বায়ুমণ্ডল থেকে বালি এবং তরল আকারে এসে স্থির হয়েছে। টাইটানের পৃষ্ঠটি একটি ঘন বায়ুমণ্ডল দ্বারা আবদ্ধ।
টাইটানের পৃষ্ঠতল
টাইটানের পৃষ্ঠতল অনেকটা পৃথিবীর মতো। তবে এটি খুবই ঠান্ডা, -১৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে জলের বরফ পাথরের ভূমিকা পালন করে। টাইটানে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপও থাকতে পারে। তবে গলিত শিলার পরিবর্তে তরল জলের "লাভা" বের হয়।
টাইটানের পৃষ্ঠতল প্রবাহিত মিথেন এবং ইথেন দ্বারা তৈরি, যা নদী খালের সৃষ্টি করে এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে বৃহৎ হ্রদগুলিকে পূর্ণ করে। পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের আর কোন স্থানে এই ধরণের তরল পদার্থের কার্যকলাপ চলে না।
টাইটানের অন্ধকার বালিয়াড়ির বিশাল অঞ্চলে বিস্তৃত। এই বালিয়াড়িগুলি গাঢ় হাইড্রোকার্বন দানা দিয়ে গঠিত যা দেখতে কফি গুড়ার মতো মনে হয়। দেখতে লম্বা, রৈখিক বালিয়াড়িগুলি আফ্রিকার নামিবিয়ার মরুভূমিতে দেখা যায়।
টাইটানের বায়ুমণ্ডল
আমাদের সৌরজগতে ১৫০টিরও বেশি চাঁদ রয়েছে, কিন্তু টাইটান একমাত্র চাঁদ হিসেবে অনন্য যেখানে ঘন বায়ুমণ্ডল রয়েছে। টাইটানের পৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। একজন ব্যক্তি প্রায় একই চাপ অনুভব করবেন যদি তিনি সমুদ্রের ১৫ মিটার গভীরে গিয়ে সাঁতার কাটেন।
যেহেতু টাইটান পৃথিবীর তুলনায় কম ভরের, তাই এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তার গ্যাসীয় আবরণকে ততটা শক্তভাবে ধরে রাখতে পারে না। ফলে টাইটানের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় ১০ গুণ বেশি উচ্চতায় বিস্তৃত থাকে, যা মহাকাশে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার।
টাইটানের বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমান প্রায় ৯৫ শতাংশ এবং মিথেন প্রায় ৫ শতাংশ। তাছাড়া অল্প পরিমাণে অন্যান্য কার্বন-সমৃদ্ধ যৌগ রয়েছে। নাসা এবং ইএসএ ক্যাসিনি-হাইজেনস মিশনের সাহায্যে টাইটানের বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন-১৪ এবং নাইট্রোজেন-১৫ আইসোটোপ পরিমাপ করেছে।
বিশ্লেষনে দেখা গেছে যে, টাইটানের নাইট্রোজেন আইসোটোপ উর্ট ক্লাউডের ধূমকেতুর সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। উর্ট ক্লাউড হলো শত শত বিলিয়ন বরফের বস্তুর মতো একটি গোলক যা সূর্য থেকে ৫,০০০ থেকে ১০০,০০০ জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিটের দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে বলে মনে করা হয়। এক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিট প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের সমান।
টাইটানে জীবনের সম্ভাবনা কতটুকু?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, টাইটানে বাসযোগ্য পরিবেশ থাকতে পারে। টাইটানের নদী, হ্রদ এবং তরল মিথেন এবং ইথেনের সমুদ্র চাঁদের পৃষ্ঠে বাসযোগ্য পরিবেশ হিসেবে কাজ করতে পারে, যদিও সেখানের কোনও জীবন পৃথিবীর জীবনের থেকে অনেক আলাদা হবে।
যদিও এখনও পর্যন্ত টাইটানে জীবনের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি; এর জটিল রসায়ন এবং অনন্য পরিবেশ এটিকে অব্যাহত অনুসন্ধানের জন্য একটি গন্তব্যস্থল হবে।
৫ ইউরেনাসের চাঁদ
ইউরেনাসের ২৮টি চাঁদের মধ্যে পাঁচটি প্রধান চাঁদ রয়েছে: মিরান্ডা, এরিয়েল, আমব্রিয়েল, টাইটানিয়া এবং ওবেরন। এই চাঁদগুলিকে কখনও কখনও "সাহিত্যিক চাঁদ" বলা হয় কারণ শেক্সপিয়ারের চরিত্রদের নামকরণে এদের নামকরণ করা হয়েছে এবং আলেকজান্ডার পোপের রচনার চরিত্রদের নামে কয়েকটি চাঁদের নামকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত চাঁদটি প্রথম দেখা গিয়েছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে। বর্তমানে এটি S/2023 U1-তে মনোনীত করা হয়েছে এবং অবশেষে ইউরেনাসের অন্যান্য চাঁদের মতো একটি সাহিত্যিক চরিত্রের নামকরণ করা হবে।
৫.১ মিরান্ডা চাঁদ
১৯৪৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড অবজারভেটরিতে জেরার্ড পি. কুপার (Gerard P. Kuiper) ইউরেনিয়ান সিস্টেমের টেলিস্কোপিক ছবিতে মিরান্ডা আবিষ্কার করেন। ১৯৮৬ সালে ভয়েজার ২-এর ভ্রমণের আগে এটিই ছিল ইউরেনাসের শেষ আবিষ্কৃত চাঁদ।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটক "দ্য টেম্পেস্ট" এর প্রসপেরোর মেয়ের নামানুসারে মিরান্ডার নামকরণ করা হয়েছে। ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের মতো, মিরান্ডা দেখতে এমন কিছু অংশ থেকে একত্রিত হয়েছিল যা সঠিকভাবে একত্রিত হয়নি (চিত্র নং-১১)। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার ব্যাসেরেএই চাঁদটি পৃথিবীর চাঁদের মাত্র এক-সপ্তমাংশ বড়।
চিত্র নং- ১১: মিরান্ডা চাঁদ
মিরান্ডা চাঁদ বহির্জাগতিক বস্তুর মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত এবং বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে "করোনা" নামে পরিচিত তিনটি বৃহৎ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, হালকাভাবে গর্তযুক্ত শৈলশিরা, উপত্যকা, যা ভারী গর্তযুক্ত ধারালো অমিল দাগের সীমানা দ্বারা পৃথক।
মিরান্ডার বিশাল ফল্ট ক্যানিয়নগুলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের তুলনায় ১২ গুণ বেশি গভীর। একটি পাথর মিরান্ডার সর্বোচ্চ খাড়ার (cliff) কিনারা থেকে পড়লে তা পাদদেশে পৌঁছাতে ১০ মিনিট সময় লাগবে কারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কম।
মিরান্ডার পৃষ্ঠতল প্রায় এরিয়েলের মতোই উজ্জ্বল, কিন্তু তাদের কেউই তাদের উপর যে সূর্যালোক পড়ে তার প্রায় এক তৃতীয়াংশের বেশি প্রতিফলিত করে না। এর থেকে বোঝা যায় যে তাদের পৃষ্ঠতল কার্বনযুক্ত পদার্থ দ্বারা কালচে হয়ে গেছে এবং ছিদ্রযুক্ত। মিরান্ডা মূলত প্রায় সমান পরিমাণে জলীয় বরফ এবং সিলিকেট শিলা দ্বারা গঠিত বলে মনে করা হয়। এর কক্ষপথ সামান্য ঝুঁকে আছে।
৫.২ এরিয়েল
১৮৫১ সালের ২৪শে অক্টোবর ইংল্যান্ডের একজন মহান অপেশাদার জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ল্যাসেল (William Lassell) এরিয়েল আবিষ্কার করেন। এর নামকরন করা হয় শেক্সপিয়ারের "দ্য টেম্পেস্ট" এবং পোপের "দ্য রেপ অফ দ্য লক" কবিতার একটি চরিত্র এরিয়েল অনুযায়ি।
এরিয়েল একটি বৃহৎ উপগ্রহ এবং এতে রয়েছে প্রায় সমান পরিমাণে জলীয় বরফ এবং সিলিকেট শিলা। এই চাঁদে কার্বন ডাই অক্সাইডও সনাক্ত করা হয়েছে।
ইউরেনাসের সমস্ত উপগ্রহের মধ্যে এরিয়েলের পৃষ্ঠটি সবচেয়ে কম বয়সী বলে মনে হয়। এতে কয়েকটি বড় গর্ত রয়েছে এবং অনেকগুলি ছোট (চিত্র নং- ১২), যা ইঙ্গিত দেয় যে, সাম্প্রতিক কম-প্রভাবশালী সংঘর্ষগুলি অনেক আগের বড় আঘাতের ফলে তৈরি বৃহৎ গর্তগুলিকে মুছে ফেলেছে।
পাঁচটি বৃহত্তম ইউরেনিয়ান চাঁদের মধ্যে এরিয়েলের পৃষ্ঠ সবচেয়ে উজ্জ্বল। তবে ছিদ্রযুক্ত পৃষ্ঠের উপর যে পরিমাণ সূর্যালোক পড়ে তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রতিফলিত হয় না। এর থেকে বোঝা যায় যে, কার্বন পদার্থের কারণে তাদের পৃষ্ঠ কালো হয়ে গেছে। সূর্য এবং এরিয়েলের মধ্যে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করলে এর উজ্জ্বলতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়।
চিত্র নং- ১২: এরিয়েল চাঁদ
পরিমাপে দেখা গেছে যে, সূর্যালোকের আগমন এবং প্রস্থানের সাথে সাথে এরিয়েলের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা তাপীয় জড়তা বিলম্ব ছাড়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং হ্রাস পায়। গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করার সময় এরিয়েল ইউরেনাসের দিকে একই মুখ থাকে। ইউরেনাসের সাপেক্ষে কম প্রবণতা এবং বিকেন্দ্রীকরণসহ এরিয়েলের কক্ষপথ প্রগতিশীল। এটি একটি নিয়মিত কক্ষপথ হিসাবে পরিচিত।
৬. নেপচুনের চাঁদ
নেপচুনের ১৬টি চাঁদ আছে। যেহেতু নেপচুনের নামকরণ করা হয়েছিল রোমান সমুদ্র দেবতার নামে, তাই এর চাঁদসমূহের নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক পুরাণে বিভিন্ন ছোট সমুদ্র দেবতা এবং নিম্ফের নামে। নেপচুনের কয়েকটি চাঁদের ছবি চিত্র নং- ১৩ এ দেখানো হলো-
চিত্র নং- ১৩: নেপচুনের চাঁসমূহ
৬.১ ট্রাইটন চাঁদ
নেপচুন আবিষ্কারের মাত্র ১৭ দিন পর, ১৮৪৬ সালের ১০ অক্টোবর ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ল্যাসেল ট্রাইটন আবিষ্কার করেন। ট্রাইটনের নামকরণ করা হয়েছে পোসেইডনের পুত্রের নামে। ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয় চাঁদ নেরেইড আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত, ট্রাইটনকে সাধারণত "নেপচুনের উপগ্রহ" বলা হত।
নেপচুনের ১৩টি উপগ্রহের মধ্যে ট্রাইটন সবচেয়ে বড় (চিত্র নং- ১৪)। এটি অস্বাভাবিক কারণ এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র বৃহৎ উপগ্রহ যা তার গ্রহের ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে।
চিত্র নং- ১৪: ট্রাইটন চাঁদ ও তার ৩ডি মডেল
বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ট্রাইটন হলো লক্ষ লক্ষ বছর আগে নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আবদ্ধ একটি কুইপার বেল্ট বস্তু। এর সাথে প্লূটোর অনেক মিল রয়েছে। আমাদের নিজস্ব চাঁদের মতো, ট্রাইটনও নেপচুনের সাথে একযোগে ঘূর্ণনে আবদ্ধ: অর্থৎ এক দিক সর্বদা নেপচুনের দিকে মুখ করে থাকে। কিন্তু এর অস্বাভাবিক কক্ষীয় প্রবণতার কারণে উভয় মেরু অঞ্চলই সূর্যের দিকে মুখ করে ঘুরে বেড়ায়।
ট্রাইটনের ব্যাস ২,৭০০ কিলোমিটার। পৃষ্ঠতলে মসৃণ আগ্নেয়গিরির সমভূমি, ঢিবি এবং বরফের লাভা প্রবাহের ফলে তৈরি গোলাকার গর্ত রয়েছে। ট্রাইটনে হিমায়িত নাইট্রোজেনের একটি ভূত্বক রয়েছে যার নীচে আছে বরফের আচ্ছাদনে শিলা এবং ধাতুর মূল অংশ।
ট্রাইটনের ঘনত্ব পানির প্রায় দ্বিগুণ। এর অর্থ হল ট্রাইটনের অভ্যন্তরে শনি এবং ইউরেনাসের বরফের উপগ্রহের তুলনায় বেশি শিলা রয়েছে।
ট্রাইটনের পাতলা বায়ুমণ্ডল মূলত নাইট্রোজেন এবং অল্প পরিমাণে মিথেন দিয়ে গঠিত। এই বায়ুমণ্ডল সম্ভবত ট্রাইটনের আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ থেকে উদ্ভূত, যা সূর্যের ঋতুগত তাপ দ্বারা পরিচালিত হয়। পৃথিবী ছাড়াও সৌরজগতের একমাত্র বস্তু হল ট্রাইটন, আইও এবং শুক্র যা বর্তমানে আগ্নেয়গিরির দিক থেকে সক্রিয়।
ট্রাইটন আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে শীতল বস্তুগুলির মধ্যে একটি। এর তাপমাত্রা -২৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চাঁদটি এতটাই ঠান্ডা যে, ট্রাইটনের বেশিরভাগ নাইট্রোজেন হিম হিসাবে ঘনীভূত। ফলে এর পৃষ্ঠে যে বরফের আভা তৈরি হয় তা সূর্যালোকের শতকরা ৭০ ভাগ প্রতিফলিত করে।
৭. বামন গ্রহ প্লূটোর চাঁদ
প্লূটোর পাঁচটি পরিচিত উপগ্রহ রয়েছে: চ্যারোন (Charon), নিক্স, হাইড্রা, কেরবেরোস এবং স্টিক্স (চিত্র নং- ১৫)। সৌরজগতের ইতিহাসের প্রথম দিকে প্লূটো এবং একই আকারের অন্য একটি বস্তুর সংঘর্ষের ফলে এই চন্দ্রমণ্ডল তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
চিত্র নং- ১৫: বামন গ্রহ প্লূটোর চাঁদসমূহ
৭.১ চ্যারোন চাঁদ
১৯৭৮ সালের জুন মাসে জেমস ক্রিস্টি এবং রবার্ট হ্যারিংটন অ্যারিজোনার ফ্ল্যাগস্টাফে অবস্থিত মার্কিন নৌ-অবজারভেটরিতে চ্যারোন আবিষ্কার। ক্রিস্টি আকেরন নদীর ওপারে আত্মা বহনকারী পৌরাণিক ফেরিওয়ালার নামানুসারে চ্যারোন নামটি প্রস্তাব করেছিলেন।
প্লূটোর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হলো চ্যারোন (চিত্র নং- ১৬)। এটি প্লূটোর আকারের প্রায় অর্ধেক। চ্যারোন ১,২১৪ কিলোমিটার প্রশস্ত। প্লূটো এবং চ্যারোনেরতাদের মধ্যে দূরত্ব ১৯,৬৪০ কিলোমিটার। চ্যারোন চাঁদটি প্লূটো হতে ১৯,৬৪০ কিলোমিটার দূরে থেকে প্রদক্ষিণ করে এবং সময় লাগে পৃথিবী হিসেবে ৬.৪ দিন।
চিত্র নং- ১৬: চ্যারোনের অসমান পৃষ্ঠদেশ
প্লূটোর চারপাশে একবার ঘুরতে সময় লাগে ১৫৩। প্লূটোর একটি ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করতেও একই সময় লাগে। এর অর্থ হলো চ্যারোন উদিত হয় না বা অস্ত যায় না। বরং প্লূটোর পৃষ্ঠের একই স্থানে ঘোরাফেরা করে। চ্যারোনের একই দিক সর্বদা প্লূটোর দিকে মুখ করে থাকে, যাকে জোয়ার ভাটা বলা হয়।
পশ্নোত্তর
পৃথিবীর চাঁদের আকার এবং অন্যান্য চাঁদের তুলনা কেমন?
পৃথিবীর চাঁদটি আকারে মাঝারি; এর ব্যাস প্রায় ৩,৭৪৯ কিলোমিটার। বৃহস্পতির চাঁদগুলো বড় বড়, যেমন গ্যানিমেড (Ganymede)। অন্যদিকে কিছু চাঁদ ছোট; যেমন- শনি ও ইউরেনাসের চাঁদগুলো ক্ষুদ্র। আকারের বৈচিত্র্য বিভিন্ন গ্রহের চাঁদগুলোর গঠন ও গঠনের প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয়।
চাঁদের গঠন ও বৈশিষ্ট্য কী কী?
চাঁদগুলো মূলত পাথুরে, বরফ ও ধাতুর সংমিশ্রণে গঠিত। অনেক চাঁদে মাটির স্তর, আগ্নেয়গিরি, উপত্যকা ও পাহাড় দেখা যায়। কিছু চাঁদে জল বা বরফের স্তর রয়েছে। বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাদের গঠন, আকার, আবহাওয়া ও পরিবেশের পার্থক্য রয়েছে।
কোন চাঁদটি সবচেয়ে বড় বা ছোট?
সর্ববৃহৎ চাঁদটি হলো গ্যানিমেড (Ganymede)। এর ব্যাস হলো প্রায় ৫,২৭০ কিলোমিটার। অন্যদিকে সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট চাঁদ হলো জুপিটার LII (S/2010 J 2)। এর ব্যাস আনুমানিক ১ কিলোমিটার।
সৌর জগতের গ্রহের চাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় চাঁদটি কোনটি?
ইউরেনাসের চাঁদ টাইটান (Titan) হলো খুবই বৈচিত্র্যময়। এটি অতি বৃহৎ এবং এর উপর জলবাষ্প, অ্যামোনিয়া ও অন্যান্য গ্যাসের স্তর আছে, যা এটিকে অন্য চাঁদ থেকে আলাদা করে তোলে।
ভবিষ্যতে আমাদের আরও নতুন চাঁদ আবিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন চাঁদ আবিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মঙ্গল ও অন্যান্য গ্রহের উপগ্রহের উপর গবেষণা চালানো হচ্ছে, যেখানে নতুন চাঁদ বা উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
প্রাণীর প্রজনন চক্রে চাঁদের কী কোন প্রভাব আছে?
কিছু প্রবাল, সিলাকুইড ও উদ্ভিজ্জ প্রাণী তাদের প্রজনন ঋতুকে চাঁদের চক্রের সাথে মিলিয়ে নেয়। চাঁদের আলো বা জোয়ার-ভাটা তাদের ডিম্বস্ফোটন ও মিলনে সাহায্য করে।
চাঁদের চেয়ে সূর্য অনেক বড়, কিন্তু পৃথিবীর উপর চাঁদের প্রভাব বেশি কেন?
চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি হওয়ায় এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তুলনামূলকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়। ফলে চাঁদের কারনে পৃথিবী বেশি প্রভাবিত হয়।
মানুষ কবে নাগাদ সৌর জগতের কোন চাঁদে বসতি স্থাপন করতে পারবে?
এক দশকের মধ্যেই মানুষ চাঁদে লম্বা সময় ধরে থাকার সুযোগ পাবে বলে আশা করছে নাসা
উপসংহার
সৌর জগতের চাঁদসমূহ বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং বিভিন্ন ধরনের। পৃথিবীর একমাত্র চাঁদটি মাঝারি আকারের, যার ব্যাস প্রায় ৩,৭৪৯ কিলোমিটার। সৌরমন্ডলে অনেক বড় বড় চাঁদ রয়েছে। যেমন- গ্যানিমিড, যা পৃথিবীর চেয়ে বড়। কিছু চাঁদ পাথুরে, যেমন পৃথিবীর চাঁদ, আবার কিছু চাঁদ বরফে ঢাকা, যেমন ইউরেনাসের কিছু চাঁদ। তাদের গঠন, আকার, পরিবেশ এবং গ্যাসের উপস্থিতিতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
গ্যানিমিড বা টাইটান সবচেয়ে বড় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ চাঁদ। কোপন কোন চাঁদে জল, অ্যামোনিয়া ও গ্যাসের স্তর রয়েছে। বিভিন্ন চাঁদের বৈচিত্র্য তাদের গঠন প্রক্রিয়া, গঠনকাল এবং পরিবেশের পার্থক্য নির্দেশ করে, যা মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।