ক্যান্সার একটি জটিল রোগ এবং এর চিকিৎিসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিভিন্ন কারণে (ধূমপান, মদ্যপান, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, পরিবেশগত দূষণ, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং বংশগত) শরীরের কোষের অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধিতে ক্যান্সার হয়।
ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। ২০১৮ সালে আনুমানিক ৯৬ লক্ষ লোকের মৃত্যু, অর্থাৎ প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর কারণ ছিল ক্যান্সার। পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস, প্রোস্টেট, কোলোরেক্টাল, পাকস্থলী এবং লিভার ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয়। পক্ষান্তরে, মহিলাদের ক্ষেত্রে স্তন, কোলোরেক্টাল, ফুসফুস, জরায়ুমুখ এবং থাইরয়েড ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি।
ক্যান্সার রোগের সমস্ত লক্ষণ চিকিৎসার মাধ্যমে দূর করার বহু বছর পরেও কেন কিছু কিছু ক্যান্সার রোগ আবার ফিরে আসে? এর পেছনে কি কারণ আছে তা জানতে পারলে চিকিৎসার পথ খুলে যাবে।
কেন ক্যান্সার ফিরে ফিরে আসে তার সম্ভাব্য উত্তর হলো- যে অবাঞ্চিত ক্যান্সার কোষগলো রোগের শুরুতে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সুপ্ত অবস্থায় ছিল তারা জাগরিত হয়ে তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করলে ক্যান্সার দেখা দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, ম্যাক্রোফেজগুলি দেহে ছড়িয়ে থাকা টিউমার কোষগুলিকে ঘুমন্ত বা সুপ্ত অবস্থায় রাখতে সাহায্য করতে পারে বলে অনুমান করা হয় (ছবি নং- ১)।
ছবি নং-১: অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ (বেগুনি) ব্যাকটেরিয়াকে আক্রমণ করেছে (কমলা)।
কত দিন সুপ্ত থাকতে পারে ক্যান্সার কোষ?
গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলি মাস, বছর, এমনকি দশকের পর দশক ধরে শরীরে অজ্ঞাতভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তবে এক পর্যায়ে কোষগুলি জেগে উঠতে পারে এবং মেটাস্ট্যাটিক টিউমার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। কেন সুপ্ত হয়, আবার কেনই বা তারা জেগে উঠে তা এখনো পরিস্কাভাবে জানা সম্ভব হয়নি।
কেমন করে সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলো পুনরায় সক্রিয় হয়?
নেচারে সম্প্রতি প্রকশিত এক গবেষনা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইনফ্লোয়েঞ্জা এবং SARS-CoV-2 (কেভিড-১৯) এর দ্বারা সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ স্থানীয় এবং সিস্টেমিক উভয় প্রদাহকেই জাগিয়ে তুলে। ইঁদুরের উপর করা পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, স্তন ক্যান্সার কোষ যা ফুসফুসে সুপ্ত অবস্থায় ছিল তা COVID-19 বা Flue এর মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগ তাদেরকে আবার ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে সক্রিয় করতে পারে (ছবি নং- ২) ।
ছবি নং-২: আইএভি-সংক্রামিত ইঁদুরের ফুসফুসের অংশ HER2 (সবুজ) এবং CD4 (ম্যাজেন্টা)।
সংক্রমণের কয়েক দিনের মধ্যে সুপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার কোষের বিস্তার ঘটে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে কার্সিনোমা কোষগুলি মেটাস্ট্যাটিক ক্ষতগুলিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে (আরো বিশদভাবে জানতে, Chia et al. 2025 এর লেখা প্রবন্ধটি পড়তে পারেন)। মানুষের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে বিজ্ঞাণীগণ বলেন (ছবি নং- ৩)।
ছবি নং- ৩: ফ্লো ভাইরাসের সংস্পর্শে মানুষের ফুসফুসের সুপ্ত ক্যান্সার
কোষগুলি (সবুজ) সক্রিয় হয়ে ওঠে (ম্যাজেন্টা)।
যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্ক (সকল ক্যান্সার) এবং ফ্ল্যাটিরন হেলথ (স্তন ক্যান্সার) ডাটাবেস থেকে ক্যান্সার রোগ হতে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, SARS-CoV-2 (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যু এবং ফুসফুসের মেটাস্ট্যাসিসের ঝুঁকি সুস্থ্য ব্যক্তির তুলনায় দ্বিগুণ।
ক্যান্সার কোষগুলো সুপ্ত রাখার জন্য দায়ী কে?
সাম্প্রতিক ইঁদুরের উপর করা দুটি গবেষণায় রোগ প্রতিরোধক কোষ সনাক্ত করা হয়েছে যা সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলিকে জাগানো হতে এবং মেটাস্ট্যাটিক টিউমার গঠন থেকে বিরত রাখতে পারে।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিনের গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ফুসফুসে স্থানান্তরিত সুপ্ত স্তন ক্যান্সার কোষগুলি সেখানে বসবাসকারী রোগ প্রতিরোধক কোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে ছিল।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের রোজেলল ক্যান্সার সেন্টারের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ (Immune cells) কোষগুলি অস্থি মজ্জায় থাকা স্তন ক্যান্সার সুপ্ত কোষগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
সুপ্ত ক্যান্সার কোষের অস্তিত্বের প্রমাণ
বিজ্ঞানীরা স্তন, প্রোস্টেট, ফুসফুস, কোলন, লিউকেমিয়া, মাল্টিপল মায়লোমা এবং কিডনি ক্যান্সারসহ অনেক সাধারণ ক্যান্সারের সুপ্ত ক্যান্সার কোষের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন।
চারজন মহিলা যারা দাতার কাছ থেকে অঙ্গ গ্রহণ করেছিলেন তাদের স্তন ক্যান্সার হয়। যখন দাতাদের কাছ থেকে অঙ্গ গ্রহণ করা হয়েছিল তখন তাদেরকে ক্যান্সার মুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। পবর্তীতে জেনেটিক পরীক্ষা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, গ্রহীতার টিউমার অঙ্গ দাতার ক্যান্সারের সাথে মিল আছে। অর্থাৎ অঙ্গদাতার শরীরে ক্যান্সার কোষ সুপ্ত অবস্থায় ছিল যা পরীক্ষায় ধরা পড়েনি।
এমন অবস্থায় গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, দাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সুপ্ত টিউমার কোষগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। ফলে পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয়েছিল। গ্রহীতাদের দেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ১৬ মাস থেকে শুরু করে ৬ বছরের মধ্যে সুপ্ত টিউমার কোষগুলি বিভক্ত হতে শুরু করে। যেহেতু অঙ্গ গ্রহীতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দমন করে রাখা হয়েছিল সেহেতু সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলি সক্রিয় হতে সক্ষম হয়।
সুপ্ত ক্যান্সার কোষের বৈশিষ্ট্য
১৯৫৪ সালে জিওফ্রে হ্যাডফিল্ড নামে একজন ইংরেজ রোগ বিশেষজ্ঞ প্রস্তাব করেছিলেন যে, চিকিৎসার কিছুকাল পর ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তি সুপ্ত থাকা ক্যান্সার কোষগুলির কারণে হতে পারে। সম্প্রতি গবেষকরা ছড়িয়ে পড়া টিউমার কোষের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে শুরু করেছেন।
সংবেদনশীল স্নায়ু কোষগুলো ক্যান্সার কোষের জিনগুলিকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে যা মেটাস্ট্যাসিস ঘটাতে পারে (ছবি নং- ৪)।
ছবি নং-৪: স্তন টিউমারগুলি তাদের বিস্তারের জন্য কাছাকাছি স্নায়ু কোষের সাহায্য নেয়
যেহেতু সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় বা একেবারেই বৃদ্ধি পায় না, তাই কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা এই কোষগুলিকে মেরে ফেলার সম্ভাবনা কম। তদুপরি সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সনাক্ত হওয়া এড়াতে পারে। তাই সুপ্ত অবস্থা এক ধরণের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থা বলে বিচেনা করা হয়।
ক্যান্সার কোষ এবং মাইক্রোএনভায়রনমেন্টের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া
গবেষকরা সুপ্তাবস্থা এবং পুনঃসক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে টিউমার কোষের পরিবেশের ভূমিকা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। এই কাজটি করার জন্য বিজ্ঞানীগণ ইঁদুর মডেল ব্যবহারে উৎসাহিত হয়েছেন। কারণ ইঁদুরের কার্যকরী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, ক্যান্সার কোষের সুপ্তাবস্থা আংশিকভাবে সুপ্ত টিউমার কোষ এবং টিউমার মাইক্রোএনভায়রনমেন্টের উপাদানগুলির (যেমন স্ট্রোমাল কোষ এবং বহির্কোষীয় ম্যাট্রিক্স) মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রনিত হয়।
সুপ্তাবস্থা বজায় রাখার জন্য প্রক্রিয়া
সুপ্তাবস্থা বজায় রাখার জন্য অনেক জৈবিক প্রক্রিয়া থাকতে পারে এবং এগুলি টিউমার কোষের ধরণ এবং শরীরে কোষের অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রাকৃতিক ঘাতক কোষের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। ইহা এক ধরণের রোগ প্রতিরোধক কোষ যা টিউমার কোষ এবং ভাইরাস-সংক্রামিত কোষ উভয়কেই আক্রমণ করতে পারে।
বেশ কয়েকটি ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, প্রাকৃতিক ঘাতক কোষগুলি অস্থি মজ্জায় ছড়িয়ে পড়া স্তন ক্যান্সারের কোষগুলিকে দীর্ঘ সময় ধরে সুপ্ত অবস্থায় রাখতে পারে। ইঁদুরের দেহ এই ধরনের কোষগুলি ইঁদুরের জীবনের অর্ধেক সময় ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল; যা মানুষের ক্ষেত্রে ২০ বছরের সমতুল্য।
সুপ্ত স্তন ক্যান্সার কোষে দুটি প্রোটিন শনাক্ত করা হয়েছে যাদের নাম BACH1 এবং SOX2; এই প্রেটিন প্রাকৃতিক ঘাতক কোষের কাজে বাধার সৃষ্টি করে ক্যান্সার কোষগুলিকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
ডঃ উইচা (Dr. Wicha ) এর মতে ক্যান্সার কোষগুলির সুপ্তাবস্থা থাকায় এবং কখন তা সক্রিয় হবে তা সম্ভবত নির্ভর করে সুপ্ত কোষগুলি কীভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তার উপর।।
ক্যান্সার কোষ কোথা হতে শক্তি পায়?
যখন রোগ প্রতিরোধী কোষ, বিশেষ করে কিছু ঘাতক টি-কোষ, টিউমার কোষে ঢুকে তখন তারা একটি প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হয়। যেমন, এর মধ্যে থাকতে পারে এমন অণু যা টি-কোষকে অকেজো করতে পারে বা অক্সিজেনের অভাব এবং শক্তির জন্য পুষ্টির অভাব হতে পারে। ফলে টি-কোষের মধ্যে ক্লান্তি ভর করে (আরো জানার জন্য ভিজিট করতে পারেন, NCI)।
একটি নতুন গবেষণায় গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, ক্যান্সার কোষের একটি উপসেট তাদের নিজস্ব শক্তির প্রয়োজনে ন্যানোটিউব ব্যবহার করে নিকটবর্তী টি-কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া অপসারণ করতে পারে (ছবি নং-৫)।
ছবি নং-৫: ক্যান্সার কীভাবে টি-কোষ থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া নিয়ে নেয় তা দেখানো হয়েছে
তাহলে এসমস্ত গবেষণার ফলাফল কী কোন কাজে আসবে? ডঃ উইচা এর মতে এই ধরনের গবেষণার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলি অপসারণের মাধ্যমে দেরীতে মেটাস্টেসিসের ঝুঁকি দূর করা। আরেকটি বিকল্প হতে পারে সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা।
ডঃ অগোরি-ঘিসু (Dr Aguirre-Ghiso) মেটাস্ট্যাটিক পুনরাবৃত্তির প্রাথমিক পর্যায়ে হস্তক্ষেপের উপায়গুলি নিয়ে গবেষণা করছেন। তার দল সম্প্রতি একটি পরীক্ষামূলক ওষুধ সনাক্ত করেছেন যা সংকেত পথকে এমনভাবে নিশানা করে যে সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলি সুপ্তাবস্থার সময় জীবিত থাকে। HC-5404 নামক ওষুধটি ইঁদুরের দেহের সুপ্ত ক্যান্সার কোষগুলিকে মেটাস্টেসিস সৃষ্টি করতে বাধা দেয়।
পরবর্তীতে HC-5404 নামক ওষুধটি গভীরভাবে আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীদের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল। খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন HC-5404 কে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রাথমিক অনুমতি প্রদান করে।
STING (Stimulator of Interferon Genes) হলো সহজাত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সাইটোপ্লাজমে অস্বাভাবিক ডিএনএ সনাক্ত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই এমন ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে যা STING এর কার্যকলাপকে বৃদ্ধি করবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় কী?
ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে
নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণগুলি পরিবর্তন করা বা এড়িয়ে চলা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:
- সিগারেট এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকসহ তামাক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন;
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন;
- প্রচুর ফল এবং শাকসবজিসহ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন;
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন;
- অ্যালকোহল ব্যবহার সীমিত করুন;
- নিরাপদ যৌনতা অনুশীলন করুন;
- হেপাটাইটিস বি এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এর বিরুদ্ধে টিকা নিন;
- অতিবেগুনী বিকিরণের সংস্পর্শ হ্রাস করুন;
- অপ্রয়োজনীয় আয়নাইজিং বিকিরণের সংস্পর্শ প্রতিরোধ করুন (যেমন পেশাগত এক্সপোজার কমিয়ে আনুন, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় বিকিরণের নিরাপদ এবং উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবহার নিশ্চিত করুন);
- শহুরে বায়ু দূষণ এবং কঠিন জ্বালানির গৃহস্থালির ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন;
- নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিন; এবং
- কিছু দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণও ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলির মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন, রেডিয়েশন পরিহার করুন
স্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন করুন এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনাচরনকে না বলুন (ছবি নং-৬)
ছবি নং- ৬: স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের খন্ড চিত্র
FAQs
মানব দেহে কি কি ধরণের ক্যান্সারের হতে পারে ?
ক্যান্সার অনেক ধরনের হতে পারে, যেমন লিউকেমিয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ইত্যাদি। প্রতিটি ধরন নির্দিষ্ট কোষ বা অঙ্গের ওপর নির্ভর করে।
ক্যান্সার কি ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে?
হ্যাঁ, ধূমপান ক্যান্সারের অন্যতম মূল কারণ। এটি ফুসফুস, মুখ ও গলার ক্যান্সারসহ অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
ওজন কমানোর শল্য চিকিৎিসা কী ক্যান্সার কমাতে পারে?
গবেষণায় দেখা গেছে যে, ওজন কমানোর অস্ত্রোপচার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
ক্যান্সার কি শুধুমাত্র বয়স্কদের হয়?
না, যদিও বয়স বাড়ার সাথে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে; তবে ক্যান্সার যে কোনও বয়সের হতে পারে। শিশুরাও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
ক্যান্সার কি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব?
অনেক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসাযোগ্য, বিশেষ করে সময়মত নির্ণয় করা ও চিকিৎসা হলে মন্দ নয়। তবে কিছু ক্যান্সার এমন কি প্রাথমিক অবস্থায় থাকলেও নিরাময় কঠিন হতে পারে।
ক্যান্সার নির্ণয়ের উপায় কি কি?
সাধারণত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রক্তের পরীক্ষা, ইমেজিং প্রযুক্তি (এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান), বায়োপসি ইত্যাদির মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়।
ক্যান্সার চিকিৎসায় কি ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়?
ক্যান্সার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউন থেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহৃত হয়।
ক্যান্সার কি সুস্থ জীবনযাত্রার মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব?
হ্যাঁ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস এড়ানো ও সচেতনতা ক্যান্সার এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার
ক্যান্সার একটি জটিল রোগ এবং এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল রোগ। শরীরের কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে ক্যান্সার হয়। বিভিন্ন কারণে ক্যান্সার হতে পারে- ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, পরিবেশের দূষণ, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, এবং বংশগত কারণ।
কিছু ক্যান্সার কোষ সুপ্ত বা লুকানো অবস্থায় থাকতে পারে, যা শরীরের এবং পরে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়ানো, সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এই রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, ফলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ও জীবনমান বৃদ্ধি পায়।