মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে। এদের সংখ্যা আনুমানিক ১০ ট্রিলিয়নেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। মহাকাশ এত বিশাল যে, সব গ্যালাক্সির সম্পূর্ণ তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। তা সত্বেও যতগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে তার সবগুলো নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখা বাস্তবসম্মত নয়। তাই আমি স্পাইরাল গ্যালাক্সির নিয়ে একটি প্রবন্ধ তৈরি করব।
আমরা জানি মহাকাশের অগণিত গ্যালাক্সি আমাদের সৌরজগতের বাইরে বিস্তৃত। এই গ্যালাক্সিগুলোর প্রতি আমাদের আকর্ষনের মূল কারণ হলো তাদের আকার, গঠন এবং দূরত্বের জন্য। তদুপরি মানুষের জানার কৌতুহল কত কিছুই না আবিস্কারে সাহায্য করছে।
এই মহাবিশ্বে কত ধরনের গ্যালাক্সি রয়েছে?
এই বিশ্বব্রহ্মন্ডে বিভিন্ন ধরনের গ্যালাক্সি রয়েছে। যেমন-
ক) সর্পিল ছায়াপথ
খ) উপবৃত্তাকার ছায়াপথ
গ) অনিয়মিত ছায়াপথ
ঘ) ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ
ঙ) লেন্টিকুলার গ্যালাক্সি এবং
চ) বামন ছায়াপথ
সর্পিল ছায়াপথ বা স্পাইরাল গ্যালাক্সি একটি বিশাল জগৎ। তাই আমি নির্বাচিত কয়েকটি স্পাইরাল গ্যালাক্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। কৌতুহলি পাঠক প্রদেয় লিংক অনুযায়ী অধিক তথ্য আহরণ করতে পারবেন।
স্পাইরাল (বা সর্পিল) গ্যালাক্সিকে আবার কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- সাধারণ সর্পিল গ্যালাক্সি (এস-এ, এস-বি, এবং এস-সি), ব্যারেড (বাধাগ্রস্ত) সর্পিল গ্যালাক্সি (এসবি-এ, এসবি-বি, এসবি-সি) এবং লেন্টিকুলার (বা লেন্স-আকৃতির) ছায়াপথ। এছাড়াও বিরল ধরনের কিছু সর্পিল গ্যালাক্সি রয়েছে, যেমন পোলারাইজড সর্পিল গ্যালাক্সি। এই বিভাজনগুলো করা হয়েছে তাদের সর্পিল বাহুর গঠন এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চলের আকারের উপর ভিত্তি করে।
(১) মিল্কিওয়ে (ছায়াপথ বা আকাশ গঙা) (Milky Way)
এটা আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সি এবং এতে প্রায় ২০০-৩০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। সূর্য থেকে এর কেন্দ্র প্রায় ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি নিয়ে নীচে আরো অলোচনা করা হলো-
সমগ্র মিল্কিওয়ে
মিল্কিওয়ে হল একটি সর্পিল ছায়াপথ যার ব্যাস প্রায় ১০০,০০০ থেকে ১,৮০,০০০ আলোকবর্ষ। এর কেন্দ্রে আনুমানিক ১০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র এবং একটি অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর আছে (ছবি নং-১)।
আমাদের সৌরজগৎ গ্যালাকটিক কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে, ওরিয়ন আর্মের মধ্যে এটি অবস্থিত। মিল্কিওয়ে স্থানীয় গ্যালাক্সির দল এবং কন্যা রাশির (Virgo) সুপারক্লাস্টারের অংশ।
আমাদের মিল্কিওয়ে অঞ্চলটি ১,০০০ আলোকবর্ষ পুরু (ছবি নং-১ দেখুন)। এক আলোকবর্ষ প্রায় ৫.৯ ট্রিলিয়ন মাইল বা ৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। তাই এটা বলা নিরাপদ যে, আমরা আপনার জীবদ্দশায় এ ছায়াপথ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবো না (আরো জানতে Discovery.com দেখুন)!
ছায়া পথের কাজিন (NGC 3949)
এনজিসি ৩৯৪৯ গ্যালাক্সিটি মিল্কিওয়ের মতো। তাই একে আকাশ গঙা বা মিল্কি ওয়ের কাজিন বলা হয়। আমাদের মিল্কিওয়ের মতো এর ছায়াপথে আছে তরুণ নক্ষত্রের নীল চাকতি, যা উজ্জ্বল পিঙ্ক নক্ষত্র তৈরির অঞ্চলের সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় উজ্জ্বল স্ফীত অংশের বেশিরভাগ নক্ষত্রই হলো বয়স্ক ও লালচে (ছবি নং-১) দেখুন।
এনজিসি ৩৯৪৯ পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি উর্সা মেজর (The Great Bear) নক্ষত্রমণ্ডলে বিগ ডিপারের (Big Dipper) দিকে অবস্থিত। আসলে এটি প্রায় ছয় বা সাত ডজন ছায়াপথের একটি আলগা ক্লাস্টারের সদস্য এবং সবার চেয়ে বড় (কৌতুহলি পাঠক NASA এর বর্ণনা দেখতে পারেন)
ছবি নং-১: সম্পূর্ণ ছায়াপথ, ছায়াপথের কাজিন, অদ্ভত বস্তু ছিটকে বের হচ্ছে, কেন্দ্র এবং কেন্দ্রেরে ঘন অংশের কিছুটা
ছায়াপথ গ্যালাক্সি হতে আশ্চর্জনক বস্তুর নির্গমন
নাসার ব্যাকইয়ার্ড ওয়ার্ল্ডস প্ল্যানেট-৯ প্রকল্পের অংশ হিসেবে অপেশাদার জ্যোতির্বিদরা WISE মিশনের তথ্য ব্যবহার করে মিল্কিওয়ে থেকে বেরিয়ে আসা দ্রুত গতিশীল বস্তু CWISE J1249 শনাক্ত করেন (ছবি নং-১)। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানে জনসাধারণের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দূরবর্তী এবং ক্ষীণ স্বর্গীয় বস্তু সনাক্তকরণে ইনফ্রারেড জ্যোতির্বিদ্যার গুরুত্ব তুলে ধরে (রআরো পড়তে পারেন Economic Times।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রাণকেন্দ্র
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রাণ কেন্দ্রটি অপটিক্যাল টেলিস্কোপের চোখ থেকে লুকিয়ে আছে ধুলো এবং গ্যাসের মেঘের আড়ালে। কিন্তু নাসার স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড ক্যামেরাগুলি ধুলোর বেশিরভাগ অংশ ভেদ করে গ্যালাক্সির কেন্দ্র অঞ্চলের নক্ষত্রগুলি ছবি তুলেছে (ছবি নং-১ (আরো জানতে দেখুন, NASA)।
মিল্কিওয়ে কেন্দ্রের ঘন বস্তুর কিছু অংশ
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের NIRCam (নিকট-ইনফ্রারেড ক্যামেরা) যন্ত্রটি মিল্কিওয়ের ঘন কেন্দ্রের একটি অংশকে নতুন করে জানার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ধনু রাশি-সি (Sgr C) অঞ্চলের এই ছবিতে (ছবি নং-১ দেখুন) আনুমানিক ৫,০০,০০০ নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে। তবে কিছু অজ্ঞাত বিষয়ও রয়েছে। সায়ান রঙে দেখানো আয়নিত হাইড্রোজেনের একটি বৃহৎ অঞ্চলে আকর্ষণীয় সূঁচের মতো কাঠামো রয়েছে যার কোন সুনির্দিষ্ট ওরিয়েন্টেশন (অভিমুখ) নেই।
পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫,০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি নক্ষত্রে ভরপুর এক অস্থির জায়গা। সেখানে অস্থির, চুম্বকীয় গ্যাসীয় মেঘ রয়েছে যা নক্ষত্র তৈরি করছে। নক্ষত্র তৈরির এলাকা থেকে বহির্গামি বাতাস, জেট এবং বিকিরণ চারপাশের গ্যাসের উপর প্রভাব ফেলে (আরো পড়তে পারেন, NASA এর বর্ণনা)।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাহু
নাসার স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত ইনফ্রারেড ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, মিল্কিওয়ের সুন্দর সর্পিল কাঠামোটি দুটি বাহু দ্বারা প্রভাবিত এবং নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় দণ্ডের (bar) প্রান্তে মোড়ানো। ছায়াপথের দুটি প্রধান বাহু (স্কুটাম-সেন্টোরাস এবং পার্সিয়াস) একটি ঘন কেন্দ্রীয় দণ্ডের প্রান্তে সংযুক্ত। আর বর্তমানে অবনমিত দুটি ক্ষুদ্র বাহু (নর্মা এবং স্যাজিটারিয়াস) কম স্পষ্ট এবং প্রধান বাহুগুলির মধ্যে অবস্থিত (ছবি নং-২)।
প্রধান বাহুগুলিতে নবীন ও পুরাতন নক্ষত্রের ঘনত্ব সব চেয়ে বেশি। তবে ক্ষুদ্র বাহুগুলিত মূলত গ্যাস এবং নক্ষত্র তৈরির কার্যকলাপের স্থান। এর অংশে সেজিটেরিয়াস এবং পার্সিয়াসের বাহুর মাঝখানে হলো ছোট্র ওরিয়ন বাহু বা ওরিয়ন স্পার যেখানে আমাদের সূর্য অবস্থিত (আরো জানতে পড়তে পারেন, NASA কর্তৃক প্রদেয় বর্ণনা)
ছবি নং-২: মিলকিওয়ে গ্যালাক্সি (ছায়াপথের) বিভিন্ন রকমের বাহু
ছায়াপথের ডাউনটাউন
এই প্যানোরামাটি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের উপরে এবং নীচের এক অভূতপূর্ব এক্স-রে দৃশ্য প্রদান করে। এই নতুন জরিপটি নাসার পূর্ববর্তী চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা টেলিস্কোপের ৩৭০টি পৃথক বিন্দুকে একত্রিত করেছে (ছবি নং-৩)।
প্রদত্ত ছবিতে চন্দ্র (Chandra) থেকে প্রাপ্ত এক্স-রে এর বিভিন্ন ব্যান্ড (কমলা, সবুজ, বেগুনি) রেডিও ডেটার (ধূসর) সাথে একত্রিত করে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছে সুতার মতো অতি উত্তপ্ত গ্যাস এবং চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে (আরো পড়ার জন্য, NASA এর রিপোর্ট দেখুন)।
ছবি নং-৩: ছায়াপথের ডাউনটাউন
এ পর্যন্ত মিল্কি ওয়ে বা ছায়াপথ নিয়ে লিখেছি। এখন আমি আরো কিছু স্পাইরাল গ্যলাক্সি নিয়ে আলোচনা করবো-
(২) আইসি ৫৩৩২ (IC5332)
এখানে আইসি ৫৩৩২ এর যে ছবিটি দেখানো হয়েছে তা NIRCam এবং MIRI যন্ত্র ব্যবহার করে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) দ্বারা প্রাপ্ত পৃথক এক্সপোজারের সংমিশ্রণ (ছবি নং-৪)। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণগুলি উপরে বাম দিকে এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপটির পর্যবেক্ষন নীচে ডানদিকে দেখানো হয়েছে।
JWST এর উচ্চ-রেজোলিউশনের ইনফ্রারেড ছবিতে কমলা এবং লাল রঙের ছায়ায় গ্যাস ও ধুলোর খাঁজকাটা প্রান্ত সূক্ষ্ম সর্পিল আকারে দেখা যাচ্ছে। তবে এই অঞ্চলগুলি এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পক্ষান্তরে হাবলের ছবিতে গ্যাস এবং ধুলো একই সর্পিল আকার অনুসরণ করে কুয়াশাচ্ছন্ন গাঢ় বাদামী লেন হিসাবে দেখা যাচ্ছে (ভিজিট করতে পারেন, Webbtelescope.org)।
(৩) মেসিয়ের ৭৪ (NGC628)
মেসিয়ের ৭৪ গ্যালাক্সিটি মীন রাশি বা মাছ নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে প্রায় ৩২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি প্রায় আধা ডজন ছায়াপথের একটি ছোট দলের মধ্যে প্রধান সদস্য (ছবি নং-৪)। অনুমান করা হয় যে, এম ৭৪ প্রায় ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্রের আবাসস্থল। তাই এটি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে সামান্য ছোট।
মেসিয়ার ৭৪ সর্পিল ছায়াপথের একটি অত্যাশ্চর্য উদাহরণ। এর নিখুঁত প্রতিসম সর্পিল বাহুগুলি কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত তরুণ নীল তারার গুচ্ছ এবং আয়নিত হাইড্রোজেনের উজ্জ্বল গোলাপী অঞ্চল দ্বারা চিহ্নিত। তারা গঠনের এই অঞ্চলগুলিতে অতিবেগুনী তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলোর আধিক্য দেখা যায় (আরো জানতে চাইলে দেখতে হবে NASA এর রিপোর্ট)।
(৪) এনজিসি ১০৮৭ (NGC1087)
এনজিসি ১০৮৭ এর ধুলোময় সর্পিল বাহুতে নতুন এবং পুরাতন নক্ষত্র উভয়ই জ্বলজ্বল করে (ছবি নং-৪)। ৮০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে Cetus নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত এনজিসি ১০৮৭ হলো একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ (Barred spiral galaxy)। এর ব্যাস ৮৭০০০ আলোকবর্ষ এবং এর একটি খুব ছোট নিউক্লিয়াস আছে।
গাঢ় লাল রঙের এই গ্যালাক্সির ধুলোর রেখাগুলি এর সর্পিল গঠনে সাহায্য করে (ছবি নং-৪)। এনজিসি ১০৮৭ এর স্টেলার বারটি (Stellar bar) (গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত লম্বাটে উজ্জ্বল-সাদা কাঠামো) অন্যান্য ব্যারেড গ্যালাক্সির তুলনায় ছোট। এতে নতুন তারার জন্ম হয় বলে অনুমান করা হয় (আরে জানার জন্য দেখুন, NASA)।
(৫) এনজিসি ১৩০০
হাবল টেলিস্কোপ ব্যারেড স্পাইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ১৩০০ এর চিত্র ধারণ করেছে। এটিকে ব্যারেড স্পাইরাল গ্যালাক্সির প্রথম আদর্শ নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্যারেড স্পাইরাল গ্যালাক্সি অন্যান্য সাধারণ স্পাইরাল গ্যালাক্সি থেকে আলাদা। কারণ এই গ্যালাক্সির বাহুগুলি কেন্দ্রের দিকে সম্পূর্ণভাবে স্পাইরাল হয় না; বরং কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস ধারণকারী তারার একটি সরল দণ্ডের দুই প্রান্তের সাথে সংযুক্ত থাকে (ছবি নং-৪)।
নীল এবং লাল সুপারজায়ান্ট নক্ষত্রগুলি, নক্ষত্রের গুচ্ছগুলি এবং তারা তৈরির অঞ্চলগুলি সর্পিল বাহু জুড়ে ভালভাবে মিশে থাকে এবং ধুলোর রেখাগুলি থাকে ডিস্ক এবং বারের সূক্ষ্ম কাঠামোতে।
এনজিসি ১৩০০ এর বৃহত্তর সর্পিল কাঠামোর কেন্দ্রের নিউক্লিয়াসটি তার নিজস্ব অসাধারণ স্বতন্ত্র "গ্র্যান্ড-ডিজাইন" কাঠামোতে আছে যা প্রায় ৩৩০০ আলোকবর্ষ দীর্ঘ। শুধুমাত্র বৃহৎ আকারের বারযুক্ত ছায়াপথগুলিতে এই ধরনের গ্র্যান্ড-ডিজাইনের অভ্যন্তরীণ ডিস্কগুলি দেখা যায়। অর্থাৎ একটি সর্পিলের ভিতর আরেকটি সর্পিল (আরো জানার জন্য পড়তে পারেন NASA এর রিপোর্ট।
ছবি নং-৪: স্পাইরাল গ্যালাক্সি আইসি ৫৩৩২, মেসিয়ের ৭৪, এনজিসি ১০৮৭, এবং এনজিসি ১৩০০।
(৬) এনজিসি ১৩৬৫
এনজিসি ১৩৬৫ হলো খুবই সুন্দর একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ফরনাক্স ক্লাস্টারে অবস্থিত। এটি একটি বৃহৎ ছায়াপথ; যা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আকারের প্রায় দ্বিগুণ এবং এটি তার বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় বার এবং সুনির্দিষ্ট সর্পিল বাহুর জন্য পরিচিত (ছবি নং-৫)।
উপরের বাম দিকে দৃশ্যমান অংশটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রের একটি দৃশ্য। উজ্জ্বল হলুদ কক্ষপথ হলো নিউক্লিয়াস। কক্ষপথের চারপাশের অন্ধকারাছন্ন উপাদান হলো গ্যাস এবং ধুলো যা দণ্ড দ্বারা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে। নীল অঞ্চলগুলি তরুণ তারার গুচ্ছগুলিকে চিহ্নিত করে (কৌতুহলি পাঠক পড়তে পারেন NASA এর রিপোর্ট)
(৭) এনজিসি ১৩৮৫ (barred spiral galaxy NGC 1385)
প্রায় ৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ব্যারেড স্পাইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ১৩৮৫ এর ছবিটি ধারন করেছে NASA/ESA হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এতে নক্ষত্ররাজি ও ধুলোর একটি আলোকিত জট দেখা যাচ্ছে (ছবি নং-৫)।
হাবল আগে একটি এনজিসি ১৩৮৫ এর একটি ছবি প্রকাশ করেছিল, কিন্তু দুটি ছবি উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। এই সাম্প্রতিক ছবিতে অনেক বেশি গোলাপী-লাল এবং অ্যাম্বার শেড রয়েছে। তবে আগের ছবিতে শীতল নীল রঙের প্রাধান্য ছিল (আরো জানতে দেখুন, NASA)।
(৮) এনজিসি ১৪৩৩ (Seyfert galaxy)
এনজিসি ১৪৩৩ এর আরেক নাম Seyfert galaxy। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটি অনন্য আঁটসাঁট উজ্জ্বল ডাবল রিং কাঠামো রয়েছে (ছবি নং-৫ দেখুন)। এখানে 'ডাবল রিং' আসলে শক্তভাবে মোড়ানো সর্পিল বাহুসমুহ যা গ্যালাক্সির ”বার” বরাবর ডিম্বাকৃতির আকারে ঘুরছে।
এনজিসি ১৪৩৩ পৃথিবী থেকে ৪৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে Horologium নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। এটি তুলনামূলকভাবে পৃথিবীর কাছাকাছি একটি গ্যালাক্সি এবং এর কেন্দ্রে একটি অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর আছে যা উচ্চ হারে সব কিছু খেয়ে ফেলছে (দেখতে পারেন, webbtelescope.org)।
ছবি নং-৫: স্পাইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ১৩৬৫, এনজিসি ১৩৮৫, এনজিসি ১৪৩৩, এবং এনজিসি ১৫১২
(৯) এনজিসি ১৫১২
এনজিসি ১৫১২ হলো Horologium এর দক্ষিণ নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ। যদিও এটি ৩০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, তথাপি ছায়াপথের দুরত্বের বিবেচনায় এই গ্যালাক্সি আমদের নিকট আত্মীয়! এটি যথেষ্ট উজ্জ্বল। ফলে অপেশাদার টেলিস্কোপ দিয়েও এক দেখা যায় (ছবি নং-৫ দেখুন)। এই ছায়াপথটি ৭০০০০ আলোকবর্ষ জুড়ে বিস্তৃত যা আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের প্রায় সমান।
এই ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলটির প্রস্থ ২,৪০০ আলোকবর্ষ যাকে নবজাতক নক্ষত্র গুচ্ছের "সার্কামনিউক্লিয়ার" স্টারবার্স্ট রিং বলা হয়। স্টারবার্স্ট হল নতুন নক্ষত্রের জোরালো গঠনের পর্ব এবং বিভিন্ন ছায়াপথের পরিবেশে পাওয়া যায় (আরো জানতে ইচে্ছ। হলে দেখতে পারেন NASA এর রিপোর্ট)
(১০) এনজিসি ১৫৬৬ (NGC 1566)
এনজিসি ১৫৬৬ হলো একটি সুন্দর ছায়াপথ, যা প্রায় ৪০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ডোরাডো নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। এর নিউক্লিয়াস অত্যন্ত উজ্জ্বল (ছবি নং-৬)। Seyfert শ্রেণীর ছায়াপথের সদস্যদের এমন বৈশিষ্ট থাকে।
এই ধরনের ছায়াপথের কেন্দ্রগুলি খুবই সক্রিয় এবং আলোকিত। এরা তীব্র বিকিরণ নির্গত করে এবং এতে সূর্যের ভরের তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ বড় কৃষ্ণগহ্বর থাকতে পারে বলে অনুমান করা হয় (আরো জনতে দেখুন, NASA)।
(১১) এনজিসি ১৬৭২
এনজিসি ১৬৭২ হলো একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ, যা পৃথিবী থেকে ৪৯ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ডোরাডো নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। এতে আছে চিত্তাকর্ষক আলোক বিন্যাস (ছবি নং নং-৬)। যে কোনো সর্পিল ছায়াপথের মতো এর উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলি ডিস্ককে পূর্ণ করে এবং এব ছায়াপথটিকে একটি সুন্দর রঙে রঞ্জিত করে।
এর দুটি বৃহৎ বাহুর হাইড্রোজেন গ্যাসের বুদবুদগুলি আকর্ষণীয় লাল আলোতে জ্বলজ্বল করে; যা নতুন জন্মানো নক্ষত্র থেকে আসা বিকিরণ দ্বারা জ্বালানীযুক্ত। ছায়াপথের কেন্দ্রের কাছে কিছু বিশেষভাবে দর্শনীয় নক্ষত্র রয়েছে যা গরম গ্যাসের বলয়ের মধ্যে অবস্থিত। এই নবগঠিত এবং অত্যন্ত উত্তপ্ত নক্ষত্রগুলি শক্তিশালী এক্স-রে নির্গত করে (NASA)।
ছবি নং-৬: স্পাইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ১৫৬৬, এনজিসি ১৬৭২, এনজিসি ২৮৩৫ এবং এনজিসি ৩৩৫১
(১২) এনজিসি ২৮৩৫
এনজিসি ২৮৩৫ হলো একটি মুখোমুখি (face-on) সর্পিল ছায়াপথ, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে হাইড্রা নক্ষত্রমণ্ডলে (The snake) অবস্থিত। এই ছায়াপথটির সর্পিল বাহুগুলির মধ্যে উজ্জ্বল নীল নক্ষত্র তৈরির অঞ্চল এবং এর কেন্দ্রে একটি অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর আছে (ছবি নং-৬)।
এই আশ্চর্যজনক ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথের প্রস্থ মিল্কিওয়ের প্রস্থের অর্ধেকের চেয়ে বেশি। এই গ্যালাক্সির নক্ষত্র তৈরির অঞ্চলে ঠান্ডা ঘন গ্যাস প্রচুর তরুণ নক্ষত্র তৈরি করে। এর বাইরের সর্পিল বাহুর উজ্জ্বল নীল রঙের অঞ্চল থেকে অতিবেগুনী আলোক রশ্মি জোরালোভাবে নির্গত হচ্ছে, যা চলমান নক্ষত্র গঠনের ইঙ্গিত দেয় (আরো জানার জন্য পড়তে পারেন NASA এর রিপোর্ট)
(১৩) এনজিসি ৩৩৫১
এনজিসি ৩৩৫১ গ্যালাক্সিটি লিও নক্ষত্রমণ্ডলে ৩৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি একটি মুখমুখি (facw-on) ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ। এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি ডিম্বাকৃতির এবং কেন্দ্রে একটি উজ্জ্বল সাদা বিন্দু যার চারপাশে রয়েছে ডিম্বাকৃতির গাঢ় এবং হালকা হলুদ বলয় (ছবি নং-৬)। ছায়াপথের ফিলামেন্টারি সর্পিল কমলা রঙের বাহুগুলি ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরে এবং বাইরের প্রান্তগুলিতে একটি প্রশস্ত বৃত্তাকার কাঠামো তৈরি করে (ESA)।
বৃহৎ টেলিস্কোপের মাল্টি ইউনিট স্পেকট্রোস্কোপিক এক্সপ্লোরার (MUSE) যন্ত্রটি নবগঠিত নক্ষত্রগুলির চারপাশকে দেখাচ্ছে লাল রঙে। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের বেলায় ধূলোময় অঞ্চকে সাদা রঙে এবং নতুন নক্ষত্রকে নীল রঙে ফুটিয়ে তুলেছে ( See NASA)।
(১৪) এনজিসি ৩৬২৭
ব্যারেড স্পাইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৬২৭ এর অবস্থান হলো লিও নক্ষত্রপুঞ্জে (সিংহ রাশি), যা ৩৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এই গ্যালাক্সিটি কুয়াশায় ঢাকা হালকা নীল রঙের নক্ষত্রসমূহ দ্বারা গঠিত দন্ডের ন্যায় কাঠামো দ্বারা বেষ্টিত যা উপরের দিকে একটি বৃহৎ কোণযুক্ত ডিম্বাকার তৈরি করে (ছবি নং-৭ দেখুন)।
দুটি বৃহৎ স্বতন্ত্র সর্পিল বাহু কেন্দ্রীয় দণ্ড থেকে শুরু হয়ে বৃত্তের পরিধির অংশ হিসাবে দেখা যায়। একটি বাম দিক থেকে শুরু হয়ে উপরে প্রসারিত হয় এবং অন্যটি ডান দিক থেকে শুরু হয়ে নীচে প্রসারিত হয় (আরো পড়তে পারেন esawebb থেকে)।
(১৫) এনজিসি ৪২৫৪
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪ তারিখে এনজিসি ৪২৫৪ এর ছবি পাঠানো হয়। এটি একটি সর্পিল ছায়াপথ, যা কমলা এবং নীল রঙে উজ্জ্বল (ছবি নং-৭)। Physics at High Angular resolution in Nearby Galaxies (PHANGS) প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে চিত্রিত ১৯টি কাছাকাছি সর্পিল ছায়াপথের মধ্যে এটি একটি। বিশ্বব্যাপী ১৫০ জনেরও বেশি জ্যোতির্বিজ্ঞানী এই প্রোগ্রামে কাজ করছেন।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা লক্ষ লক্ষ নীল রঙের নক্ষত্রের ছবি ধারণ করেছে। অন্যদিকে টেলিস্কোপের মিড-ইনফ্রারেড ইন্সট্রুমেন্টে জ্বলন্ত ধুলো তুলে ধরেছে (কৌতুহলি পাঠক NASA রিপোর্ট দেখতে পারেন)।
(১৬) এনজিসি ৪৩০৩ (Messier 61)
এনজিসি ৪৩০৩ কে Messier 61 নামেও অভিহিত করা হয়। এই ছায়াপথটি পৃথিবী থেকে ৫৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এর আকার প্রায় মিল্কিওয়ের সমান এবং ব্যাস প্রায় ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। এই ছায়াপথটির মধ্যে ছয়টি সুপারনোভা দেখা গেছে।
এনজিসি ৪৩০৩ মুখমুখি সর্পিল ছায়াপথের একটি অংশ, যা এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নোঙর করা। এটি একেবারে ডানদিকে মাঝখানে অবস্থিত। গাঢ় কমলা রঙের সুর্পিল বাহুসমূহ দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে (ছবি নং-৭)।
মেসিয়ার ৬১ হল এক ধরণের ছায়াপথ, যা স্টারবার্স্ট গ্যালাক্সি নামে পরিচিত। স্টারবার্স্ট গ্যালাক্সিগুলিতে নক্ষত্র গঠনের হার অবিশ্বাস্যভাবে বেশি। যত বেশি ক্ষুধা তত বেশি খাবার লাগে। তাইতো এই গ্যালাক্সি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই (জ্যোতির্বিদ্যার ভাষায়) গ্যাসের আধার শেষ করে ফেলছে (আরো জানার জন্য পড়তে পারেন, NASA)।
ছবি নং-৭: স্পাইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ৩৬২৭, এনজিসি ৪২৫৪, এনজিসি ৪৩০৩, এবং এম ১০০।
(১৭) এনজিসি ৪৩২১ (Messier 100)
এনজিসি ৪৩২১ কে মেসিয়ের ১০০ বা এম ১০০ নামেও অভিহিত করা হয়। এম ১০০ গ্যালাক্সিটি কন্যা রাশির ক্লাস্টারের অন্যতম উজ্জ্বল সদস্য। এই গ্যালাক্সিটি বসন্তকালীন কোমা বেরেনিসেস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। একে একটি মাঝারি আকারের অপেশাদার টেলিস্কোপের মাধ্যমেও দেখা যায়। এম ১০০ আমাদের মিল্কিওয়ে-এর মতো সর্পিল আকৃতির। ছায়াপথটিতে উজ্জ্বল নক্ষত্রের দুটি বিশিষ্ট বাহু এবং আরও কয়েকটি ক্ষীণ বাহু রয়েছে (ছবি নং-৭ দেখুন)।
যদিও ছায়াপথটি লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলে অনুমান করা হয়; তবুও হাবল টেলিস্কোপ যে ধরনের বিশদ তথ্য দিয়েছে তাতে প্রতিবেশী ছায়াপথগুলিকে দশগুণ কাছাকাছি বলে মনে হয় (কৌতুহলি পাঠক আররো পড়ার জন্য NASA রিপোর্ট দেখতে পারেন)।
(১৮) এনজিসি ৪৩৫৩
পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে কন্যা রাশি (কুমারী) নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত ব্যারেড স্পাইরাল এই গ্যালাক্সিটি (এনজিসি ৪৩৫৩) দেখাতে খুবই আশ্চর্যজনক (ছবি নং-৮)। যখন কম শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষন করা হয় তখন এনজিসি ৪৩৫৩ এর চেহারা ভৌতিক মনে হয়। তাই অপেশাদার জ্যোতির্বিদ লেল্যান্ড এস. কোপল্যান্ড ১৯৫০ এর দশকে এটিকে "হারানো গ্যালাক্সি" নামে অভিহিত করেন।
এনজিসি ৪৩৫৩ এর লম্বা, সর্পিল বাহুগুলির মধ্যে উজ্জ্বল নীলাভ রঙগুলি বেশি সংখ্যক তরুণ এবং উষ্ণ তারার উপস্থিতি নির্দেশ করে। পক্ষন্তরে এই ছায়াপথের স্ফীত অংশের হলুদ বর্ণ ইঙ্গিত দেয় যে, এই কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি পুরানো এবং শীতল নক্ষত্রের আবাসস্থল (অতিরিক্ত তথ্যের জন্য পড়তে পারেন NASA এর রিপোর্ট)।
(১৯) এনজিসি ৫০৬৮
এনজিসি ৫০৬৮ হলো একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ, যাতে হাজার হাজার নক্ষত্র তৈরির অঞ্চল এবং প্রচুর পরিমাণে আন্তঃনাক্ষত্রিক ধুলো রয়েছে (ছবি নং-৮)। ১৭৮৫ সালে ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল প্রথম একে আবিষ্কার করেন। এনজিসি ৫০৬৮ কন্যা রাশির দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রায় ২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, ছায়াপথটির ব্যাস ৪৫০০০ আলোকবর্ষ।
এর সর্বত্র কয়েকটি উজ্জ্বল তারা দৃশ্যমান; তবে কেন্দ্রে অনেক বেশি। ধুলোর ক্লাম্প এবং ফিলামেন্টসমূহ গ্যালাক্সিটির ভিতর এক ধরনের কাঠামো তৈরি করে যা ছায়াপথ এবং সর্পিল বাহুর মোড় অনুসরণ করে চলে। লাল গ্যাসের বৃহৎ উজ্জ্বল বুদবুদগুলো ধুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে (আরো পড়ার জন্য esawebb দেখুন)।
ছবি নং-৮: স্পইরাল গ্যালাক্সি এনজিসি ৪৫৩৫, এনজিসি ৫০৬৮, এনজিসি ৭৪৯৬, এবং এনজিসি ২২৮৩।
(২০) এনজিসি ৭৪৯৬
এনজিসি ৭৪৯৬ হলো একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ এবং পৃথিবী থেকে ২৪ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে গ্রাস নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। ওয়েবের (JWST) তোলা ছায়াপথ এনজিসি ৭৪৯৬ এর কেন্দ্রটি একটি উজ্জ্বল সাদা বিন্দু দিয়ে শুরু এবং গলে গিয়ে উজ্জ্বল কমলা রঙে পরিণত হয় (ছবি নং-৮)।
এই গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে আটটি বিশিষ্ট বিবর্তন স্পাইক নির্গত হয়। একটি উজ্জ্বল কমলা রঙের অর্ধ বৃত্তিয় চাপ যা দেখতে একটি পাতলা, পশ্চাদমুখী S বার এর মতো এবং মুখুমুখি (face-on) সর্পিল ছায়াপথের দুটি বাহু তৈরি করে (আরো জানতে ভিজিট করতে পারেন, webbtelescope.org)।
(২১) এনজিসি ২২৮৩
এনজিসি ২২৮৩ একটি ব্যারেড সর্পিল ছায়াপথ এবং প্রায় ৪৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ক্যানিস মেজর নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত। এটি গরম গ্যাস এবং ধুলোর স্ফীত ও ছিদ্রযুক্ত মেঘে ভরা। লাল, কমলা এবং হলুদ রঙ নির্দেশ করে যে, বিভিন্ন কণা থেকে তা নির্গত হচ্ছে (ছবি নং-৮ দেখুন)।
সবচেয়ে উজ্জ্বল রঙগুলি কেন্দ্রে এবং দুটি সর্পিল বাহুতে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসে। তারার গুচ্ছগুলি বাহু বরাবর গ্যাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। আমাদের কাছাকাছি যা দেখা যায় তা হলো কয়েকটি বড়, উজ্জ্বল সাদা তারা (আরো জানতে দেখুন, esawebb)।
FAQs
প্রশ্ন: বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত স্পাইরাল গ্যালাক্সি কোনটি?
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, যা "অ্যাপোলো ১৩" নামেও পরিচিত। এটি আমাদের সৌরমণ্ডলের অবস্থিত।
প্রশ্ন: স্পাইরাল গ্যালাক্সির প্রধান উপাদানগুলি কী?
এর মধ্যে থাকে ধূলো, গ্যাস, স্টার ড্যানড্রো এবং বিভিন্ন ধরনের তারকাগোষ্ঠী। বাহুগুলিতে সাধারণত তারা বেশি দেখা যায়।
প্রশ্ন: স্পাইরাল গ্যালাক্সির বাহুগুলি কিভাবে তৈরি হয়?
বাহুগুলি সাধারণত তারকাগোষ্ঠীর সঞ্চালন এবং মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে তৈরি হয় এবং গ্যালাক্সির কেন্দ্রীয় অংশ থেকে বাহিরে প্রসারিত হয়।
প্রশ্ন: স্পাইরাল গ্যালাক্সির আকার কতটা বড় হতে পারে?
সাধারণত এর ব্যাস কয়েক লক্ষ থেকে এক মিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাক্সি ডিপার গ্যালাক্সির ব্যাস প্রায় ১৫ লাখ আলোকবর্ষ।
প্রশ্ন: স্পাইরাল গ্যালাক্সি কিভাবে তৈরি হয়?
এটি মূলত মহাকর্ষীয় আকর্ষণ এবং মহাজাগতিক সংঘর্ষের মাধ্যমে গঠিত হয়। ধূলো এবং গ্যাসের কারণে তারকাগোষ্ঠীর গঠন হয়।
প্রশ্ন: স্পাইরাল গ্যালাক্সির কেন্দ্র কোথায় থাকে?
এর কেন্দ্র সাধারণত একটি সুপারম্যাসিভ কালো গর্ত দ্বারা ঘিরে থাকে, যেখানে মহাকর্ষীয় বল খুবই শক্তিশালী।
প্রশ্ন: স্পাইরাল গ্যালাক্সি কেমন করে পর্যবেক্ষণ করা হয়?
অ্যামাটার টেলিস্কোপ, স্পেক্ট্রোস্কোপ এবং অন্যান্য মহাকাশযানে সরঞ্জাম ব্যবহার করে আমরা এগুলি পর্যবেক্ষণ করি।
প্রশ্ন: আমাদের সৌরমণ্ডল কি স্পাইরাল গ্যালাক্সির অংশ?
হ্যাঁ, আমাদের সৌরমণ্ডল একটি স্পাইরাল গ্যালাক্সির অংশ, যার নাম "মিল্কিওয়ে"।
সারাংশ
মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি রয়েছে। এরা এতো দূরে যে, বিশেষ ধরনের টেলিস্কো ছাড়া এদর দেখতে পাওয়া যায় না। NASA/ESA এর বিজ্ঞানীগণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন গ্যালাক্সি আবিষ্কারের। মানুষের জানার আগ্রহ এবং অন্যত্র বসবাসের ইচ্ছা আবিস্কারের নেশাকে ধরে রাখছে।
গ্যালাক্সিগুলো বৃহৎ এবং লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার দূবে অবস্থিত। মহাকাশে নানান রকমের গ্যালাক্সি রয়েছে। তাদের মধ্যে সর্পিল গ্যালাক্সি হলো এক ধরনের চ্যাপ্টা ঘূর্ণায়মান চাকতি। এদের কেন্দ্র সাধারনত স্ফীত এবং সেখান থেকে সর্পিল বাহুগুলো বের হয়ে আসে। আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি, মিল্কিওয়েও একটি সর্পিল গ্যালাক্সি। সর্পিল বাহুগুলোতে মূলত নতুন তারা, গ্যাস এবং ধূলিকণা থাকে।
স্পাইরাল গ্যালাক্সির কেন্দ্র দেখতে কখনো ঘোলাটে বাদামি, নীল বা সাদা চোখের মতো বা উপবৃত্তাকার। আর বাহুতে নানান রঙের খেলা। পেটে রয়েছে আগ্নেয়গিরীর মতো ক্ষুধা; আর নতুন নতুন নক্ষত্র তৈরির কারখানা।